ব্লুজ কমিউনিকেশনসের আমন্ত্রণে শুক্রবার (২১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় ‘ইসমত আপাকে নাম’ নাটকটি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এই শিল্পী পরিবার। কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তনের দর্শক উপভোগ করেছেন তাদের পরিবেশনা।
শুরুতে ঢাকার দর্শককে শুভেচ্ছা জানান নাসিরুদ্দিন শাহ। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় এসে আমরা খুব আনন্দিত। আপনারা আমার চলচ্চিত্র দেখেছেন। কিন্তু মঞ্চনাটক দেখেননি। মঞ্চই হলো অভিনয়ের মূল জায়গা। ’
আলোচিত ও অমর এক নারীবাদী লেখিকার তিনটি ছোটগল্পকে নাটকের জন্য বেছে নিয়েছেন মোটলি নাট্যদলের প্রধান নাসিরুদ্দিন শাহ। এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং কাজ।
ইসমত চুঘতাই (১৯১৫-১৯৯১) সফল উর্দু লেখিকা। নারীবাদী তীব্রতা তার লেখায় স্পষ্ট। বিংশ শতাব্দীর উর্দু সাহিত্যে রশিদ জাহান, ওয়াজেদা তবাসসুম, কুয়ারাতুলিয়ান হায়দারের পাশাপাশি ইসমতের কাজ উল্লেখযোগ্য। আধুনিক ভারতে তিনি মেয়েদের যৌনতা বিষয়ে মধ্যবিত্তের বিপন্নতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। লেখার ধরনের কারণে নবীন ও বোদ্ধাদের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার ছোটগল্পগুলো সমগ্র নারীবাদী সাহিত্যকে মজবুত ভিত দিয়েছে। ‘লিহাফ’ গল্পটি লেখার জন্য ইসমতকে কোর্টেও যেতে হয়েছিলো!
‘ইসমত আপাকে নাম’ কোনো নাটকের নাম নয়। ইসমতের লেখা তিনটি গল্পের কোলাজ। তিনটি পৃথক গল্প ‘চুইমুই’, ‘মুঘল বাচ্চা’ ও ‘ঘরওয়ালী’তেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নারীর জীবনের জটিল অধ্যায়গুলো। গল্প তিনটির মধ্য দিয়ে নির্দেশক ও শিল্পীরা তুলে ধরেছেন পুরুষনিয়ন্ত্রিত সমাজে নারী ও তার অস্তিত্ব রক্ষার ভিন্ন তিন কাহিনি। শিক্ষণীয় বার্তার পাশাপাশি এতে ছিলো ব্যঙ্গ, হাস্যরস ও বুদ্ধিদীপ্ত অভিনয়।
কেমন হলো তিনজনের অভিনয়? এবার পর্যালোচনা করা যাক একে একে তিনটি পর্ব।
‘চুইমুই’
এই গল্পটি ফুটিয়ে তুলেছেন হীবা শাহ। ট্রেনের একটি কামরায় দুই সন্তানসম্ভবা নারীর বৈপরীত্য উঠে এসেছে এতে। তাদের একজনের মধ্যে সুস্থ-সবল সন্তানের জন্ম দেওয়ার লক্ষ্য ছাড়া আর কোনো উৎকণ্ঠা নেই। কিন্তু অন্য নারীর স্বামীও নেই, অর্থকড়িও নেই। সে নিজেই নিজের জীবিকা নির্বাহ করে। ট্রেনের কামরাতেই সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে সে। হিবা একাই ভিন্ন দুই নারীর চরিত্রে চমৎকার অভিনয় করেছেন।
‘মুঘল বাচ্চা’
চেয়ারে বসেই গল্পটি বলে গেছেন রত্না পাঠক শাহ। মুঘল শাসনামলের পরের প্রেক্ষাপটে সাজানো এই গল্প অসম দম্পতি গোরিবি ও কালে মিয়াকে কেন্দ্র করে। যেখানে মুঘলদের বংশধর অহংকারী বর কালে মিয়া বিয়ের রাতেই স্ত্রীকে একা ও অসহায় করে রেখে চলে যায়। এখানে রত্মা পাঠকের অভিনয় দীর্ঘদিন মনে রাখবেন ঢাকার দর্শক।
‘ঘরওয়ালি’
শেষেই ছিলো চমক। এই গল্পে নাসিরুদ্দিন শাহ শুধু দুটি চরিত্রেই নিজেকে পাল্টাননি, পুরুষ থেকে নারী হয়ে উঠেছেন নিজের বর্ণনায়। এই গল্প অবিবাহিত মির্জা ও তার দাসী লাজ্জোকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে মির্জা লোকটা নার্ভাস, আর লাজ্জো মুক্তমনা। তার অনেক পূজারী, কিন্তু লাজ্জো শুধু তার মালিকের যত্নে নিবেদিত। শেষমেষ নিজেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে সে। কারণ তার চাকরানি থেকে সে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে নিবেদিত স্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৭
এসও