এক মাসের ব্যবধানে কিংখানখ্যাত এই নায়ক বিপুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। প্রায় দুই দশকের ক্যারিয়ারে তাকে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়নি।
চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের সঙ্গে বিয়ের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর থেকে কাকতালীয়ভাবে চতুর্মুখি সঙ্কটে পড়েছেন আলোচিত এই নায়ক। কিছুতেই যেন কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেরই প্রশ্ন, তবে কি কোণঠাসা পড়ছেন শাকিব খান?
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, শাকিব খান খুব করে চেয়েছিলেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ওমর সানী-অমিত হাসান প্যানেলে জিতুক। সেই অনুযায়ী খেটেওছিলেন তিনি। কিন্তু ফল পেলেন উল্টো। যে মিশা সওদাগরের সঙ্গে শাকিবের ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ চলমান, সেই মিশাই অধিষ্টিত হলেন সভাপতির আসনে। তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হলেন এফডিসির আরেক দাপুটে নায়ক জায়েদ খান। অনুমান করা কঠিন নয় যে, নিজের ঘরেই এখন কোণঠাসা হয়ে পড়তে হবে সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবির শিল্পী শাকিবকে।
নির্বাচনের ফল প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন শাকিব— এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। শাকিব আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে, সানী-অমিত প্যানেলের ভরাডুবি হতে যাচ্ছে। হিসেব পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন কি? আর কেনই বা তিনি শুক্রবার (৫ মে) রাত দুটোর দিকে ভোটগণনার কক্ষে প্রবেশ করেছিলেন, প্রশ্নগুলো এখন মুখে মুখে, মেলেনি জবাব।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মদ্যপ ছিলেন শাকিব, চিৎকার-চেচামেচিতে তেমনটিই বোঝা গিয়েছে। জনপ্রিয় এই নায়ক এমন আচরণের ‘দাঁতভাঙা জবাব’ও তক্ষুণই পেয়েছিলেন। প্রতিপক্ষের কাছে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। আর তোপের মুখে ‘মাথা হেঁট’ করিয়ে চিরচেনা এফডিসি চত্বর ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে শাকিবকে। এর মধ্য দিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্রজয়ী এই অভিনেতা। সমালোচকদের মতে, আরেকটি ভুল যুক্ত হলো তার জীবনে।
স্ত্রী অপু বিশ্বাসকে মেনে নেবেন না, তারপর জলঘোলা করে মেনে নিলেন, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে বিরোধে টিকতে না পেরে ক্ষমা চাইলেন, সবশেষ নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীদের পরাজয় ঠেকানোর ব্যর্থচেষ্টা— ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করলেই শাকিবকে বিচার করা কঠিন হয়না। তবে এসব ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবেই দেখছেন সালমান শাহর অনুসারী এই নায়ক। অনেকে বলছেন, খান সাহেব হয়তো ঠাহর পারছেন না তিনি কোন পথে চলছেন। নির্বাচনে প্রার্থী না হয়েও পরাজয়ের গ্লানি বইতে হচ্ছে শাকিবকে— এই হলো নাম্বার ওয়ান নায়কের নিয়তি।
শাকিব খানের হাত ধরে ভারতীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের ঢাকায় প্রবেশ, অপুর সঙ্গে বিরোধের জেরে ‘অসংলগ্ন’ মন্তব্য, স্ত্রীকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে বাঁধা দেওয়া, নিজেকে ‘সুপারস্টার’ দাবি করা কিংবা পরিচালকদের হেয় করা— এসব কারণে দাপুটে এই নায়কের ইমেজ বেশ সংকটে পড়েছে। নাম্বার ওয়ান নায়কের আসনটি এতোদিন ঠিকঠাক ধরে রাখলেও শাকিব খানকে এখন চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে এগুতে হচ্ছে। প্রশ্ন একটিই, সব কিছু সামলে উঠতে পারবেন তো ‘ষড়যন্ত্রের শিকার’ শাকিব খান।
শাকিবের হেটার যেমন আছেন, তেমনি আছেন অগণিত ভক্ত। অস্বীকার করা যাবেনা, সময়ের সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন নায়ক তিনি। শাকিবের বিকল্প নেই ইন্ডাস্ট্রিতে। চোখ বন্ধ করে শাকিবের নামে এখনও কোটি কোটি টাকা লগ্নি করতে প্রস্তুত শত শত প্রযোজক। এই নায়ক চাইলেই সবকিছু তার অনুকূলে আসতে পারে। কিন্তু কি ভাবছেন শাকিব, কে জানে? বিশাল জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে আর ভালো কাজ দিয়ে সবার মন জয় করা ছাড়া ‘বিকল্পহীন নায়ক শাকিব’-এর আর কোনো বিকল্প আছে কি?
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৭
এসও