কিন্তু সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আগামী ২৫ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে সঞ্জয়লীলা বানসালি পরিচালিত ‘পদ্মাবত’। ছবি মুক্তিতে আবার বাগড়া দিয়ে বসেছেন কর্ণি সেনারা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) ফরিদাবাদের একটি সিনেমা হলের টিকেট কাউন্টারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন কর্ণি সেনারা। এরই মধ্যে ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে সেই তাণ্ডবের ভিডিও। যা রীতিমতো ভাইরাল হয়ে উঠেছে।
এদিকে হায়দ্রবাদের বিজেপি বিধায়ক রাজা সিং বলেন, “সিনেমা হল জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে, ভাংচুর করে যেভাবে হোক বন্ধ করতে হবে ‘পদ্মাবত’-এর প্রদর্শন। ”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তাও শেয়ার করেছেন রাজা সিং। যেখানে তিনি বলেছেন, “পদ্মাবত’র প্রদর্শন বন্ধের জন্য আমরা যতোদূর সম্ভব বিরোধিতা করছি। আমাদের প্রতিবাদের ফলেই চারটি রাজ্য ছবিটির প্রদর্শন বন্ধ করে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায় সব উল্টে দিলো। ’
ওই বার্তায় তিনি আরও বলেছেন, ‘নাম বদলে ফেললেই ইতিহাস বদলে যায় না। সঞ্জয়লীলা বানসালি শুধু নামটি পাল্টেছেন। কিন্তু চিত্রনাট্য একই রয়েছে। যেভাবে সম্ভব এই ছবির প্রতিবাদ করুন। প্রয়োজনে সিনেমা হলে আগুন জ্বালাতে, ভাংচুর করতেও পিছপা হবো না। ’
ক’দিন আগে ‘পদ্মাবত’ ছবির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়ার জন্য ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন ছবির দুই প্রযোজক অজিত আন্ধারে ও সঞ্জয়লীলা বানসালি। কেননা সেন্সরের ছাড়পত্র পাওয়ার পরও ‘পদ্মাবত’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো কয়েকটি রাজ্য। এগুলো হলো- রাজস্থান, হরিয়ানা, গুজরাত, মধ্য প্রদেশ ও হিমাচল।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সেই মামলার শুনানি হয়। এসময় সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র জানান, এ ঘটনা সাংবিধানিক বিচারবুদ্ধির ক্ষেত্রে একটি অভিঘাত। সেন্সরের মতো সংস্থা ছাড়পত্র দেওয়ার পর রাজ্যগুলো তাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে না। যে রাজ্যগুলো ইতিমধ্যে ছবিটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তা কার্যকর তো হবেই না, এমনকি নতুন করে কোনও রাজ্য ‘পদ্মাবত’-কে নিষিদ্ধ করতে পারবে না।
এদিকে, গত ২৮ ডিসেম্বর সঞ্জয়লীলা বানসালির ড্রিম প্রজেক্ট ‘পদ্মাবতী’ দেখে ইউএ সার্টিফিকেট দিয়েছেন ভারতীয় সেন্সর বোর্ডের প্রধান প্রসূন যোশী, ইতিহাসবিদ অরবিন্দ সিং, চন্দ্রমণি সিং ও কে কে সিং। তবে এর নাম পাল্টে ‘পদ্মাবত’ রাখেন তারা। ১৬শ শতকের কবি মালিক মুহাম্মাদ জায়াসির লেখা একটি কাব্যের নাম এটি।
দীর্ঘ ৭০০ বছর আগের সময়ের চিত্তরের রানি পদ্মিনীর জীবন নিয়ে বিগ বাজেটের এই চলচ্চিত্রটি গত ১ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, গুজরাট, হরিয়ানাসহ বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ করছে নানা ধর্মীয় সংগঠন। নানা জায়গায় বিক্ষোভে কণ্ঠ মিলিয়েছেন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারাও। এমনকি ছবির প্রধান অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোনের নাক কেটে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন কর্ণি সেনারা।
বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিলো, দিল্লির শাসক আলাউদ্দিন খিলজির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে রাজপুত রানি পদ্মিনী ১৬ হাজার নারীকে নিয়ে চিতায় ঝাঁপ দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘পদ্মাবতী’ সিনেমায় তার সে মর্যাদা ও আত্মত্যাগকে খাটো করা হয়েছে। খিলজির সঙ্গে পদ্মিনীর মুখোমুখি কখনও দেখা না হলেও চলচ্চিত্রের গল্পে তাদের মধ্যে একটি স্বপ্নদৃশ্য রাখা হয়েছে। আর এ নিয়েই ঘটছে নানা ধরনের তাণ্ডব।
‘পদ্মাবত’-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন দীপিকা পাড়ুকোন। এতে তার সহশিল্পী রণবীর সিং ও শহিদ কাপুর। ২৫ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ছবিটি।
** কর্ণি সেনাদের তাণ্ডবের ভিডিও
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৮
বিএসকে