অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস এবার দিতে যাচ্ছে ৯০তম অস্কার। গত ৯০ বছরে অস্কারের স্মরণীয় কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আজকের আয়োজন।
১৯২৯
হলিউডের রুজভেল্ট হোটেলে প্রথম অস্কার অনুষ্ঠান হয়েছিলো ১৯২৯ সালের ১৬ মে। এটি উপস্থাপনা করেন অভিনেতা ডগলাস ফেয়ারব্যাঙ্কস সিনিয়র। নির্বাক যুগ থেকে ওইবারই একমাত্র সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জেতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ‘উইংস’।
১৯৩৯
অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার্স আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস ওই বছর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কারটির ডাকনাম হিসেবে ‘অস্কার’ ব্যবহার শুরু করে। জনশ্রুতি আছে, অ্যাকাডেমি লাইব্রেরিয়ান মার্গারেট হেরিকই সোনালি মূর্তিটির নাম দিয়েছিলেন ‘অস্কার’।
১৯৪০
অভিনয়ের জন্য প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী পারফরমার হিসেবে অস্কার জেতেন হ্যাটি ম্যাকড্যানিয়েল। ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ ছবিতে দারুণ অভিনয়ের সুবাদে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হন তিনি। তবে অনুষ্ঠানে তাকে বসতে হয়েছিলো পৃথক টেবিলে। এ ঘটনার প্রায় ৫১ বছর পর আরেক কৃষ্ণাঙ্গ নারী অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে অস্কার পান। তিনি হলেন ‘গোস্ট’ (১৯৯০) ছবির তারকা হুপি গোল্ডবার্গ।
১৯৫৩
অস্কার অনুষ্ঠান প্রথমবার টেলিভিশনে দেখানো হয় ওই বছর। এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে উপস্থাপক বব হোপ বলেছিলেন, ‘অসংখ্য ঝলমলে তারকা আজ রাতে আপনার ঘরে হাজির হয়েছেন, ব্যাপারটা মজার না? আমেরিকা জুড়ে গৃহিণীরা তাদের স্বামীর দিকে তাকিয়ে হয়তো বলছেন- শার্ট পরে নাও, জোয়ান ক্রফোর্ড আসছেন!’
১৯৬৩
‘লিলিস অব দ্য ফিল্ড’ ছবির জন্য প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা হিসেবে অস্কার জেতেন সিডনি পয়টিয়ার।
১৯৬৮
ওই বছরের ৪ এপ্রিল মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র আততায়ীদের হাতে নিহত হওয়ার কারণে অস্কার অনুষ্ঠান নির্ধারিত সময় থেকে দুই দিন পিছিয়ে যায়।
১৯৬৯
সেরা অভিনেত্রী বিভাগে একমাত্র ওইবারই যৌথভাবে পুরস্কার পান দু’জন। ‘দ্য লায়ন ইন উইন্টার’-এর জন্য ক্যাথেরিন হেপবার্ন ও ‘ফানি গার্ল’-এ অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে বারবারা স্ট্রাইস্যান্ড এই স্বীকৃতি পান। তবে হেপবার্ন অনুষ্ঠানে যাননি।
১৯৭৩
‘দ্য গডফাদার’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা হন মার্লন ব্রান্ডো। কিন্তু চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে আমেরিকার প্রতিবেশী দেশগুলোর নাগরিকদের হেয়ভাবে উপস্থাপনের প্রতিবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানটি বর্জন করেন তিনি। তার পক্ষে মঞ্চে ওঠেন ভারতীয় সমাজকর্মী শচীন লিটলফিদার, কিন্তু অস্কার মূর্তি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান তিনি।
২০০২
হ্যালি বেরি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে অস্কার জেতেন। এখনও এই রেকর্ড আছে তার দখলে। সোনালি মূর্তি গ্রহণ করে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক নাম-পরিচয়হীন কৃষ্ণাঙ্গ নারীর জন্য এখন সুযোগ তৈরি হলো। আজ রাতে সেই দরজা খুলে গেছে। ’
২০০৩
অস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বিভাগে পুরস্কারজয়ের রেকর্ড গড়ে ‘দ্য লর্ড অব দ্য রিংস: দ্য রিটার্ন অব দ্য কিং’। মনোনয়ন পাওয়া প্রত্যেক বিভাগে সেরা হয়েছে এটি। এর আগে ১৯৫৯ সালে ‘বেন-হার’ ও ১৯৯৭ সালে ‘টাইটানিক’ ১১টি করে পুরস্কার জেতে অস্কারে।
২০০৩ সালেই ‘দ্য পিয়ানিস্ট’-এর জন্য সেরা পরিচালক হন রোমান পোলানস্কি। কিন্তু অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেননি তিনি। কারণ ১৯৭৭ সালে এক শিশুকে ধর্ষণের কারণে সাজা হয়েছে তার। যদিও মিলনায়তনে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে তাকে অভিবাদন জানান।
২০০৯
‘দ্য হার্ট লকার’ ছবির জন্য প্রথম নারী হিসেবে অস্কারে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জেতেন ক্যাথরিন বিগেলো। ওইবার এ বিভাগে হেরেছেন তার প্রাক্তন স্বামী ‘অ্যাভাটার’-এর স্রষ্টা জেমস ক্যামেরন।
২০১৩
‘সিলভার লাইনিংস প্লেবুক’ ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার নিতে মঞ্চে ওঠার সময় পড়ে যান জেনিফার লরেন্স। এরপর অতিথিরা সবাই তাকে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান। অস্কারের সোনালি মূর্তি হাতে নিয়ে তিনি রসিকতা করে বলেন, ‘আপনারা সবাই দাঁড়িয়েছেন কারণ আমি পড়ে গেছি! এটা খুব বিব্রতকর ঘটনা। ’
২০১৬
টানা দ্বিতীয়বারের মতো অস্কারের সব অভিনয়শিল্পী বিভাগে মনোনয়ন পান ২০ জন শ্বেতাঙ্গ তারকা। এ কারণে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ‘অস্কারস সো হোয়াইট’ হ্যাশট্যাগ। এ ঘটনার পর নারী ও সংখ্যালঘু সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধির পরিকল্পনার ঘোষণা দেয় অ্যাকাডেমি কর্তৃপক্ষ।
২০১৭
সব কৃষ্ণাঙ্গ অভিনয়শিল্পী আছেন এমন প্রথম ছবি হিসেবে অস্কারে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জেতে ‘মুনলাইট’। যদিও মঞ্চের পেছনে বিজয়ীর খাম নিয়ে জটিলতা হওয়ায় ‘লা লা ল্যান্ড’কে সেরা ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথমে। পরে জটিলতা কেটে ছড়িয়েছে জোছনা!
অস্কারের ৯০তম আসর বসবে আগামী ৫ মার্চ। স্টার মুভিজ ও স্টার মুভিজ এইচডি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে অনুষ্ঠানটি। গতবারের মতো এবারের আয়োজনও উপস্থাপনা করবেন জিমি কিমেল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৮
বিএসকে