আনিকা মাহিনের লেখা ও রোকেয়া রফিক বেবীর নির্দেশনায় ‘সুতায় সুতায় হ্যানা ও শাপলা’ নাটক শুরু হয় পালাগান দিয়ে। গায়েন বর্ণনা শুরু করে হ্যানার জীবনগাঁথা।
হ্যানার গল্পটা তার দেশের গল্প। মায়ের গল্প, সূচি কর্মের গল্প, প্রেমের গল্প, শিল্পের জন্য ত্যাগের গল্প। গল্পের এক পর্যায়ে হ্যানার প্রেমিকের সঙ্গে বিয়ের কথা পাকাপাকি, বিয়ে নিয়ে সব তোড়জোড়। কিন্তু যখন শুনতে পায় প্রেমিকের মুখে, বিয়ের পর ছেড়ে দিতে হবে তার শিল্পকর্ম, তখন এক কঠিন সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হয় হ্যানা। সে সিদ্ধান্ত নেয়, গতানুগতিক জীবন তার জন্য নয়। তার বেঁচে থাকা মায়ের দিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নিয়ে, সূচিকর্ম নিয়ে। শিল্পের প্রতি তার প্রগাঢ় প্রেম তাকে স্থির করে শিল্পের নির্যাস নিয়ে বেঁচে থাকতে।
অন্যদিকে, শাপলার গল্পটা স্থানীয় দর্শকের পরিচিত গল্প। সব হারানোর গল্প, চিরায়ত লোকজশিল্পের গল্প, ঐতিহ্য হারানোর গল্প, তার শিল্পী পরিচয় হারানোর গল্প। বাবার মৃত্যুর পর অভাবের তাড়নায় সে চলে আসে গ্রাম ছেড়ে শহরে। পেছনে ফেলে আসে তার গ্রাম, তার মা, আর নকশিকাঁথা। ফেলে আসা সুঁই-সুতার বদলে তার হাতে উঠে আসে কলের যন্ত্র। শাপলা শিল্পী থেকে হয়ে ওঠে শ্রমিক। নিজ সত্তাকে হারিয়ে শাপলা রূপান্তরিত হয় যন্ত্রে। গল্পের এক পর্যায়ে শাপলার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
হঠাৎ মায়ের মৃত্যু সংবাদ বয়ে নিয়ে আসে এক সাদাখাম। এর কিছুদিন পর শাপলা তার শরীরের ভেতর নতুন প্রাণের আভাস টের পাই। বিবাহহীন সম্পর্কের ভেতরে মাতৃত্ব? এই কঠিন প্রশ্ন তাকে ঠেলে নিয়ে যায় আত্মহত্যার পথে। পর মুহূর্তে শাপলা সিদ্ধান্ত নেয় বেঁচে থাকার। তার নিজের জন্য, অনাগত জীবনের জন্য। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। কারখানার অগ্নিকাণ্ডে শাপলার জীবন শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৯
ওএফবি