শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ সম্মিলন অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীরা যোগদান করেন এ সম্মিলনে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সম্মিলনের মূল পর্বে শুরু হয় আলোচনা সভা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। মূল পর্বের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। এছাড়া সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নারায়ণ চন্ত্র শীল, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এস. এম. হারুন-অর-রশীদ এবং লাইলাক কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান সেলিনা চৌধুরী। এছাড়া অনুষ্ঠানটিতে দেশবরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
শুরুতেই স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দেবু চৌধুরী বিএমএফের কার্যক্রমের রূপরেখা তুলে ধরেন। সংস্থাটির সভাপতি গাজী আব্দুল হাকিম এ সাংস্কৃতিক সংগঠনের দৈন্যদশা তুলে ধরে দেশের যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের সেবা, কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য বেশকিছু উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক নারায়ণ চন্দ্র শীল নিজেও একজন শিল্পী। তিনি তার বক্তব্যে সঙ্গীতাঙ্গনে যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কণ্ঠশিল্পীদের চেয়ে যন্ত্রশিল্পীদের গুরুত্ব কোনো অংশেই কম না। যন্ত্রশিল্পীদের সহযোগিতা ছাড়া একজন খালি গলায় সঙ্গীত পরিবেশন করতে পারেন না। যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীরাই গানকে সুরেলা, সুমধুর ও আনন্দময় করে তোলেন। অথচ একটি অনুষ্ঠানে একজন কণ্ঠশিল্পী ১৫ মিনিট গান গেয়ে লাখ টাকা সম্মানি নেন। অপরদিকে টানা কয়েক ঘণ্টা কাজ করে একজন যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী পান হাজার পাঁচেক টাকা। এরকম বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী গানের ফিউশান সৃষ্টি করে কনফিউশান তৈরি করা হচ্ছে। এটা গানের মাধুর্য নষ্ট করে।
তিনি জানান, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী দু’বছর আগেই বাংলাদেশ বেতারে ২৯৫ জন সঙ্গীত শিল্পীকে সরকারি বেতনভুক্ত করা হয়েছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল নিজেও একজন বাঁশীবাদক। তিনি বলেন, ৬৪ প্রকার কলাবিদ্যার মধ্যে সঙ্গীত হলো শ্রেষ্ঠ। বলা হয়, ‘ন বিদ্যা সঙ্গীতাৎ পরা’ অর্থাৎ সঙ্গীতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কোনো বিদ্যা নেই। এর দ্বারা ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ সবই লাভ হয়।
সারাদেশ থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নন্দিত যে সব যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন তাদের উদ্দেশ্যে আবু হেনা বলেন, গানের মধ্যে আপনারা যে রস সঞ্চার করতে পারেন তা ওস্তাদের চেয়েও বেশি কিছু। বর্তমান সরকার সংস্কৃতিবান্ধব সরকার হিসেবেই পরিচিত। ২০২০ ও ২০২১ সাল পরপর দু’টি বিশেষ বছরে যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের এগিয়ে নিতে হবে। এজন্য তার নিজের জায়গা থেকে যতটুকু করা সম্ভব তার সর্বোচ্চটুকু করার আশ্বাস দেন তিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, উপমহাদেশ থেকে যে ব্যক্তি বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক সম্মানিত তিনি কোন কণ্ঠশিল্পী নন, তিনি একজন যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী, তিনি হলেন পণ্ডিত রবিশংকর। অতএব যন্ত্রসঙ্গীতকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই।
একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে টিপু মুনশি বলেন, আমি ও আমার বাবা দু’জনেই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। যুদ্ধের সময় যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে সঙ্গীতের মাধ্যমে বিনোদন ও প্রেরণা দান করতেন।
অনুষ্ঠানে দুইজন যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীকে বিএমএফ সম্মাননা ক্রেস্ট ও উত্তরীয় তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন-বিশিষ্ট বেহালাবাদক খলিলুর রহমান এবং বিশিষ্ট গিটারবাদক জাহাঙ্গীর হায়াত খান।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৯
এমকেআর/ওএইচ/