ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিনোদন

‘আইস্যালা’ এবং রকস্টার মিলানামা

স্যামুয়েল হক, লেখক-গীতিকবি ও সংগীত গবেষক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
‘আইস্যালা’ এবং রকস্টার মিলানামা মিলা

মিলা- নামটি শুনলেই মনের মধ্যে ভেসে ওঠে আর্মি স্টেডিয়ামে লাখো তরুণ তরুণীর উন্মাদনা। বাপু রাম সাপুরে, কোথায় যাস বাপু রে অথবা রুপবানে নাচে কোমর দোলাইয়া, নাচো গো হেলিয়া দুলিয়া প্রভৃতি গানগুলো যেনো শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত।

 

বেডরুম আর পল্টন ময়দান একাকার হয়ে যায় মিলার গানে। প্রাইভেট অথবা পাবলিক, ঘর আর বাহির বলে কিছুই থাকে না। ‘ব্যক্তিগত’কে যারা পবিত্র বলে শনাক্ত করেছিলেন, মিলা তা চুরমার করে নিজের সবকিছু পাবলিক করে দেন। তাইতো মিলা নিজের উল্লাস পাবলিককে নিয়ে যেমন উদযাপন করেন, তেমনি তার বিপন্নতাও দর্শককে নিয়ে উদযাপন করতে দেখি আমরা।

ফাল্গুন শুধুই আমার হয় কিভাবে? হেমন্ত তো সকল প্রাণীকুলের জন্যই আসে। জীবনস্রোতের ভাঁজে ভাঁজে আনন্দ ও বিপন্নতার ছাপ মিলার মনের গহীনে গাঁথা রয়েছে বলেই সর্বনাশ এবং পৌষমাস দুটোই একসঙ্গে গানে আনতে পারেন। তাই হয়তো নিটশের ‘মাইন্ড ইজ হেল’ বাক্যটি মিলা’র বেলায় একেবারেই খাটে না। মিলা ভেতরে-বাহিরে একই।  

একজন তারকা যখন পাবলিক ফিগার হয়ে ওঠেন তখন অন্যদের মুখে শুনি তার সব হয় অথবা সব যায়। মিলার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনের ভেতর কোনও কিছু পুষে রাখার কায়দা কানুন রপ্ত করেতে শেখেননি। নজরুল গীতি শেখা মেয়েটি নজরুলের ঢংয়ে গান না করে ব্যক্তি নজরুলের মত চিৎকার করে ভালো লাগার কথা, সুর, সংগীত গানে প্রকাশ করে। অগুনতি বাবা-মায়ের মুখে শুনেছি, তাদের বাচ্চাদের মিলার গান না ছেড়ে ভাত খাওয়াতে পারেন না। হয়তো এই স্বভাবের কারণেই মিলা নিজের অটোবায়োগ্রাফি নিজেই নির্মাণ করেন।

গানের কোনও দেশ হয় না, গানের কোনও ভূখণ্ড থাকে না। গান স্থানিক পরিচয় ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ে ভাষার বিস্তৃত পৃথিবীতে। মিলার অ্যালবাম প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাটে-মাঠে-ঘাটে, শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে বেজে ওঠে সে গান। মিলা নিজে গান লেখেন, সুর করেন, কণ্ঠ দেন, মিউজিক করেন। মিলাকে বাংলাগানের ‘কুইন অফ পপ’ বলা চলে।  

২০০৬ সালে ‘ফেলে আসা’ নামে মিলার প্রথম অ্যলবাম আসে। অ্যালবামটির সুর, সংগীত করেন বালাম। লিরিক জাহিদ পিন্টুসহ অন্যান্যরা। মিলার দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘চ্যাপ্টার ২’  ২০০৭ সালে আসে ফুয়াদ ফিচারিং মিলা নামে। এই অ্যালবামে ১২টি গান রয়েছে, যার প্রায় প্রত্যেকটি গানই ছড়িয়ে থাকা পৃথিবীময় বাংলা ভাষা-ভাষীদের মনে ঝড় তোলে। নিজের ভাষায় ম্যাডোনার মতো একজন ‘পপ কুইন’ পেয়ে উল্লাসে মেতে ওঠে। এই অ্যালবামের সবকটি গান লিখেছেন সাহান কবন্ধ, সুর ও সংগীত করেছেন ফুয়াদ। অ্যালবামে গীটার বাজিয়েছেন সোহেল, বাঁশি বাজিয়েছেন তঞ্জু, ভায়োলিন বাজিয়েছেন সেলিম। ফুয়াদের নতুন সাউন্ডের সঙ্গে ক্যাচি কথায় মিলার কণ্ঠের মেলবন্ধন বাংলা গানের নতুন ধারার সংযোজন করে। এই অ্যালবামের অন্যতম গান হলো বাপুরাম সাপুরে, যাত্রাবালা, শুকনো পাতার নুপুরসহ অন্যান্য। এই অ্যালবামটি মিলাকে মাটি থেকে আকাশের তারায় পরিণত করে দেয়।

মিলার তৃতীয় অ্যালবাম ‘রি-ডিফাইন্ড’ ২০০৯ সালে আবার ফুয়াদ ফিচারিং মিলা নামে প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামে ১৫টি গান রয়েছে, যেখানে কয়েকটি গানের দুই ধরনের কম্পোজিশন ছিল।  

অ্যালবামটির বেশির ভাগ গানের লিরিক লিখেছেন শাহান কবন্ধ। সুর ও সংগীত করেছেন ফুয়াদ আল মুক্তাদির। দোলা, ডিসকো বান্দর, বৃষ্টি নাচে তালে তালে, তুমি কি সাড়া দিবে প্রভৃতি। হাছন রাজার ‘নেশা লাগিলো রে’ গানটি এই অ্যালবামে রিমেক করা হয়েছে। এই অ্যালবামের গান মিলার আগের অ্যালবামের জনপ্রিয়তাকেও ছাড়িয়ে যায়।

প্রতিটি কনসার্টে মিলা হুক আর্টিস্ট হিসেবে স্থান করে নেয়। অ্যালবামের গীটার-হারমোনিয়ামে রাফা, গীটারে আরো ছিলেন সোহেল, লিংকন ডিকস্টা। চ্যাপ্টার ২, রিডিফাইনড অ্যালবাম দুইটির কভার ডিজাইন করেন খাদেমুল জাহান। অটোবায়োগ্রাফিতে গান থাকছে। সবকটি গানের লিরিক, সুর ও সংগীত করেছেন মিলা নিজেই। এর মধ্যে তিনটি গান আলাদাভাবে রিলিজ করা হয়েছে জি সিরিজের ইউটিউব চ্যানেলে। ‘আইস্যালা’ অটোবায়োগ্রাফি ফিল্মেরই একটি গান।

বাংলাদেশের গ্রোয়িং ডিজে কালচারে নিজের অবস্থান জানান দিতেই এই গানটি মিলা করেছেন বিশেষভাবে। ডিজে কমিউনিটির সবাই বেশ সাদরেই গ্রহণ করেছেন মিলার এই প্রয়াস। যে কারণে নতুন বছরে প্রায় সব ক্লাব-পার্টিতেই ইডিএম ধাঁচের ‘আইস্যালা’ গানটি বাজছে তাদের প্লেয়ারে। ২০২১ সালে মিলার আরও নতুন ২/১টি গান তার ভক্তদের মুখে হাসি ফোটাবে- এই প্রত্যাশা তো করাই যায়।

 

 

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২০
ওএফবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।