ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৩
ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির পাখি

ফরিদপুর: ফসলে ক্ষতিকর কীটনাশকের ব্যবহার ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ফরিদপুর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এক সময় পাখির কলকাকলিতে গ্রাম-বাংলার মানুষের ঘুম ভাঙত।

এখন আর আগের মতো সেই পাখির ডাক শোনা যায় না।

হারাতে বসা পাখির মধ্যে রয়েছে ঘুঘু, বাবুই, টুনটুনি, কাঠঠোঁকরা, ফ্যাসকো, কোকিল, ডাঁহুক, মাছরাঙা, বউ কথা কও, সরালি, রাতকানা, সাদা বক, কানাবক, লালবক, জ্যাঠাবক, জলকুকু, ঠোঁটভাঙা, ধূসর কোয়েল, তোতাপাখি, ধলাঘুঘু, সুইচোর, পানকৌঁড়ি, সাতভায়রা, ডুবডুবি, গাংচিল, চাকলা, দোলকমল, প্যাঁচা, বালিহাঁস, বড় হাড়গিলা, রাজ শকুনসহ আরও অনেক নাম না জানা পাখি।

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের পর থেকে ফরিদপুর জেলার বড় অংশ ফসলি জমিতে আগাছানাশক, কীটনাশক ও জমিশোধক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাছাড়া চোরাপথে আসা ভারতীয় উচ্চ দূষণীয় কীটনাশক অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে জলবায়ুর পরিবর্তন ও পাখিদের অভয়ারণ্য এ লোকালয় গড়ে না ওঠার কারণে পাখিগুলো বংশ বিস্তার করতে পারে না।

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ৬৫ বছর বয়সী প্রবীণ কৃষক আয়নাল মৃধা বলেন, আমরা আগে জমিতে কীটনাশক দিতাম না। ফলে সে সময় মাঠেঘাঠে হরেক রকম পাখি নেচে বেঁড়াত। ফসলি মাঠে পাখির অবাধ বিচরণের ফলে অতিষ্ঠ হয়ে মাঠে পাহারায় বসতে হতো, আবার কখনো নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ফসল ঘরে তুলতে হতো। কিন্তু এখন আর সে সব পাখি দেখা যায় না, পাখির ডাক শোনাও যায় না।

এ ব্যাপারে স্থানীয়রা বাংলানিউজকে বলেন, এক সময় পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙতো এ অঞ্চলের মানুষের। দিনদিন পাখির সংখ্যা কমতে থাকায় এখন আর চোখে পড়েনা।

তারা আরও বলেন, এ জেলার মানুষ দিনদিন জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বাড়িয়েছে; যার ফলে ফসলের মাঠে পাখিদের খাবার পোকামাকড়ের বংশবৃদ্ধি কমেছে। জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈবসারের ব্যবহার বাড়ালে একই সাথে জমিতে ভালো ফসল উৎপাদন হবে সাথে পাখিদের খাবার কীটপতঙ্গও জন্মাবে যা খেয়ে পাখিরা বাঁচতে পারবে। ফলে, পাখিদের বংশবৃদ্ধি বাড়বে।

জেলার কয়েকজন পাখি বিশেষজ্ঞ জানান, পাখিদের বংশবৃদ্ধি বাড়াতে গাছে কলস বা হাঁড়ি বেঁধে দেওয়ার কাজ করা যেতে পারে। যাতে পাখিরা নিরাপদে ডিম ও বাচ্চা ফুটাতে পারে। এছাড়া পাখিদের অবাধ বিচরণ বাড়ানোর জন্য কৃত্রিম অভয়ারণ্য সৃষ্টির সঙ্গে পাখির জন্য গাছে গাছে বাসা বেঁধে দেওয়া যেতে পারে।

জেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একেএম আসজাদ বাংলানিউজকে বলেন, অব্যাহত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রাণিদেহে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এ প্রতিক্রিয়ায় পাখিকুল বিলুপ্ত হচ্ছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তো রয়েছেই।  

তিনি আরও বলেন, পাখিদের বিচরণের জায়গা বাড়াতে হবে। পাখিদের বাসযোগ্য বনজঙ্গলসহ বিভিন্ন গাছপালার অভয়ারণ্য বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া পাখিদের শিকার করা থেকে বিরত রাখতে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিসহ প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি রাখা উচিত।  
অন্যদিকে, জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈবসারের ব্যবহার বাড়ালে জমিতে ফড়িং, পোকা-মাকড় বাড়বে আর এগুলো খেয়ে পাখিরা বাঁচতে পারবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।