ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সুন্দরবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে কঠোর অবস্থানে বন বিভাগ

এস এস সোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৪ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৩
সুন্দরবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে কঠোর অবস্থানে বন বিভাগ

বাগেরহাট: বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে সারা বছরই কম-বেশি দর্শনার্থী থাকেন। দীর্ঘক্ষণ বনের মধ্যে অবস্থান করায় বিভিন্ন ধরনের খাবার ও পানির জন্য অনটাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার করেন তারা।

ব্যবহার শেষে এসব প্লাস্টিকের মোড়ক এবং খালি বোতল ফেলে দেওয়া হয় সুন্দরবনে। ফলে প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সুন্দরবনের প্রাণিকূলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে পরিবেশবিদ ও গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে, এতদিন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি বন বিভাগ। সম্প্রতি প্লাস্টিক বন্ধে নড়েচড়ে বসেছে সুন্দরবন বন বিভাগ। বনের অভ্যন্তরে পানি ও স্থলভাগে যাতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, পলিথিন ও অপচনশীল দ্রব্য ফেলতে না পারে সেজন্য সুন্দরবনে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে সুন্দরবনের ভিতরে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের ৭টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সুন্দরবনে চলাচলকারি কোনো নৌযান বা পর্যটকবাহী নৌযান থেকে কোনো প্রকার সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, পলিথিন বা অপচনশীল দ্রব্য সুন্দরবনের অভ্যন্তরে পানি ও স্থলভাগে যাতে কেউ ফেলতে না পারে তা কঠোরভাবে মনিটরিং ও নিশ্চিত করতে হবে।

পর্যটকবাহী জলযান তেকে বনভূমিতে প্রবেশের সময় কোনো পর্যটক সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের মোড়ক চিপস, বিস্কুট কেক বা অন্য কোনো খাদ্য সামাগ্রীর প্যাকেট, পানি বা অন্য কোনো পানীয়ের বোতল বহন করতে পারবেন না।

সুন্দরবন ভ্রমণে পর্যটকদের দীর্ঘ পথ অতিক্রমের ক্ষেত্রে অর্থ্যাৎ কটকা, জামতলা, নীলকমল পরিদর্শনের সময় পানি পানের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট ট্যুর গাইডরা সঙ্গে পানির বড় বোতল বা জার নেবেন এবং সেখান থেকে পর্যটকদের পানি সরবরাহ করবেন।

সুন্দরবনে ১ দিনের ট্যুর পরিচালনায় সম্পৃক্ত ট্রলার ও নৌযানগুলোতে সিঙ্গেল ইউজ খাবারের প্লেট, গ্লাস, পলিথিন ব্যবহার করা যাবে না এবং কোনো প্রকার বর্জ্য পানিতে ফেলা যাবে না।

সুন্দরবন ও সংলগ্ন নদীতে চলাচলকারী লঞ্চ ও ট্রলার মালিক এবং তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সমিতির সদস্যদেরকে তাদের নৌযানে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের থালা, গ্লাস, বাটি, পলিথিন ইত্যাদি যাতে ব্যবহার করা না হয় এবং সুন্দরবনের নদীতে ফেলা না হয় সে সম্পর্কে অবহিত করা হবে। সব টুরিস্ট স্পটে সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে।

যেসব বন কর্মী পর্যটকবাহী লঞ্চে নিরাপত্তা গাইড হিসেবে থাকবেন এবং সংশ্লিষ্ট ট্যুরিস্ট এবং বন বিভাগের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত বনকর্মীদেরকে এ বিষয়ে মনিটরিং ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে।

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ প্লাস্টিক দূষণমুক্ত রাখার স্বার্থে কেউ যদি এসব নির্দেশনা অমান্য করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

গত ২৯ মার্চ এডিপি অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সুন্দরবনে পরিবেশ দূষনকারী সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। এরপরই বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করে সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগ।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এই বনকে রক্ষায় আমরা বদ্ধ পরিকর। এজন্য সুন্দরবনে দূষণ সৃষ্টিকারী সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক বন্ধে আমরা কঠোর নির্দেশনা জারি করেছি। আশাকরি আমরা সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে পারব।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৩
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।