ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বরিশালে উদাসীনতায় পুকুর-খাল-নদী দূষণের কবলে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
বরিশালে উদাসীনতায় পুকুর-খাল-নদী দূষণের কবলে

বরিশাল: প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষায় জলাশয়-জলাভূমির গুরুত্ব শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা বরিশালের আয়োজনে নগরের পুলিশ লাইন্স রোডের সেলিব্রেশন পয়েন্টে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অধ্যাপক আ. মোতালেব হাওলাদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ওমর ফারুখ, পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক, আনজুমান নেছা, বরিশাল সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. মকসুমুন হাকিম রেজা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বেলার বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ক লিংকন বায়েন। এরপর প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষায় জলাশয়-জলাভূমির গুরুত্ব শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন বেলার নেটওয়ার্ক সদস্য মো. রফিকুল আলম।

তিনি তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে বিগত ৬৫ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন বছর পর্যন্ত পাঁচ বার ‘ম্যাস এক্সটিঙ্কস’ ঘটেছে যাকে ‘বিগ ফাইভ’ বলা হয়। যার কারণে ৭৫ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়। এতে ডাইনোসরের মতো বিশালাকায় প্রাণিগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এগুলো মূলত: প্রকৃতিগতভাবে ঘটেছে। মানব সৃষ্ট অনিয়মের কারণে গত ১০ হাজার বছরে বিশ্বের সব প্রাণীবৈচিত্র্যের যেটুকু ক্ষতি হয়নি, তা গত ২০০ বছরে এক হাজার গুণ হারে বেড়েছে।

উন্মুক্ত আলোচনায় বরিশালের সুধীজনরা বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসীনতা ও নির্লিপ্ততায় বরিশালের একের পর এক পুকুর, খাল, নদী দখল ও দূষণের কবলে পড়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এ অঞ্চলের জলাশয়-জলাভূমি রক্ষা করা খুবই জরুরি। সিটি করপোরেশন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের উচিত জলাশয়গুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।

সেইসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনকেও যথাযথ কার্যকর করার তাগিদ সুধীজনদের।

তারা আরও বলেন, দেশে আইন আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন নেই। যারা আইনের বাস্তবায়ন করবে তাদের নির্লিপ্ততার সুযোগে ভূমিদস্যুরা জলাশয় ও জলাভূমি দখলে নিচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সার্বিক পরিবেশ। সৃষ্টি হচ্ছে বিপর্যয়। এখনই আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন না হলে আমাদের পরিবেশ সুরক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

আলোচকরা আরও বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সাধারণকে সম্পৃক্ত করে কাজ করার আহ্বান জানাবে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। অথচ উল্টোভাবে সাধারণ জনতাকে এখন পরিবেশ রক্ষায় আন্দোলন করতে হচ্ছে।

গুরুত্বপূর্ণ মতামত দিয়ে বক্তব্য দেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি আবুল খায়ের সবুজ, কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার আনোয়ার জাহিদ, অ্যাডভোকেট আব্দুল হাই মাহবুব, হীরন কুমার দাস মিঠু, সহকারী অধ্যাপক টুনু রানী কর্মকার, নারী নেত্রী জেসমিন আক্তার, রাজনীতিবিদ সিকদার হারুন মাহমুদ, সাংবাদিক মিথুন সাহা, সৈয়দ মেহেদী হাসান, এটিএম খোরশেদ আলম, যোসেফ বিশ্বাস, বেবী জেসমিন, জাহানারা বেগম স্বপ্না প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অতিথিরা বলেন, আমাদের জীবন প্রবাহের জন্যই জীববৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখতে হবে। জলাশয়-জলাভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইকোসিস্টেম ব্যাহত হয়। বিশ্বময় শিল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের কারণে বিশ্বের তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যাওয়ার কারণে নানা রকম বিপর্যয় শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে আমরা কিভাবে টিকে থাকতে পারি সে বিষয়ে বাস্তবধর্মী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। বায়ু, মাটি, পানিসহ দেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে অর্থাৎ এই বিপর্যয়ের সমষ্টিগত ক্ষতি মোকাবেলা করা এখন আমাদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২৩
এমএস/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।