ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উড়ে শিকার ধরতে পটু বিরল ‘তুরমতি বাজ’ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
উড়ে শিকার ধরতে পটু বিরল ‘তুরমতি বাজ’  শিকারের আশায় ছুটে চলেছে ‘তুরমতি বাজ’। ছবি: শামীম আলী চৌধুরী

মৌলভীবাজার: ‘বাজ’ মানেই শিকারি পাখি। তবে স্বাভাবিক ধরনের শিকারি নয়।

এরা বিশেষ ধরনের শিকারি বা তীক্ষ্ম শিকারি পাখি। দূরদৃষ্টি, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত, নখ, ঠোঁট, এই চারটির ওপর নির্ভরশীল তার টিকে থাকার সব কৌশল। উড়ন্ত শিকার সহজে ধরতে পটু এরা। তার দৃষ্টিসীমানায় ভুলক্রমে কোনো শিকার চলে এলেই আর রক্ষে নেই। তীব্র বেগে ছুটে গিয়ে তাকে দারুণ শক্তিশালী নখ দিয়ে জপটে ধরবে বাজ পাখিটি। বেচারার আর নিস্তার নাই। নখাঘাতে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়বে সে।

দারুণ শিকারি এ পাখির বাংলা নাম ‘তুরমতি বাজ’। ইংরেজি নাম Red necked Falcon এবং বৈজ্ঞানিক নাম Falco chicquera। এটি বিরল প্রজাতির পাখি। প্রকৃতিতে কম দেখা মেলে। ‘বার্ড ফটোগ্রাফি’ বা ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফিতে এমন বিরল কিছু পেলে গেলে আলোকচিত্রীদের আনন্দের কোনো সীমা থাকে না! 

তুরমতি বাজের অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন আলোকচিত্রগুলো ধারণ করেছেন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী শামীম আলী চৌধুরী। এ পাখির ছবিধারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গতবছর ২০২৩ সালে ২৫ ডিসেম্বর তারিখে একটি পরিযায়ী পাখির উদ্দেশ্যে রাজশাহী যাই। ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হওয়ায় পাখিটির দেখা পাইনি। যেখানে পাখিটির অবস্থান ছিল তার পাশেই ভেলা বিল নামে একটি বিলে বসেছিলাম। কয়েক প্রজাতির হাঁস প্রজাতির পাখির দেখা পেলাম। এদের ছবি তুলছিলাম।

শিকারের আশায় ছুটে চলেছে ‘তুরমতি বাজ’।  ছবি: শামীম আলী চৌধুরী
 
ছবিধারণের অভিজ্ঞতায় তিনি বলেন, এমন সময় ক্যামেরার ভিউ ফাইন্ডারে লাল মাথা একটি পাখি কচুরিপানার মাঝে দেখা পেলাম। কোনো কিছু বোঝার আগেই পাখিটি উড়াল দেয়। তখন বুঝতে পারলাম এটা ‘বাজ’ জাতীয় পাখি। ততক্ষণে পাখিটির বেশ কিছু উড়ন্ত ছবি ক্যামেরায় বন্দি করি। এমন বহুবার হয়েছে যে, কাঙ্ক্ষিত পাখির দেখা না পেয়ে অন্য কোনো বিরল প্রজাতির পাখি পেয়েছি।

পাখিটির নাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এদের ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত লম্বায় ৩১-৩৬ সেন্টিমিটার। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির ঘাড় ও মাথা পোড়ামাটির মতো লাল। চোখ বাদামি। চোখের চারদিক, পা ও আঙুল হলুদ। নখ কালো। ঠোঁট হলুদ ও আগা কালো। স্ত্রী ডিমে ৩২-৩৫ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। বাবা শিকার করে আনে ও মা সেই শিকার ঠোঁট দিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাচ্চারা প্রায় ৪৮ দিনে স্বাবলম্বী হয় ও নীল আকাশে ডানা মেলে।

‘তুরমতি বাজ’ লোকালয়, পতিত জমি, ধানক্ষেতসহ খোলা প্রান্তরে ঘুরে বেড়ায়। শিকারি পাখি বড় বড় গাছ, বড় বড় স্থাপনা বা বৈদ্যুতিক বড় খুঁটির ওপর বসে চারদিকে খেয়াল করে। গাছের উঁচু ডাল কিংবা বৈদ্যুতিক তারে বসে শিকার খুঁজতে থাকে।  সাধারণত ওরা আকাশে উড়ন্ত অবস্থায়ই শিকার ধরে। মূলত চড়ুই, খঞ্জনসহ অন্যান্য ছোট ছোট পাখি ধরে খায়। এ ছাড়া বাদুড়, চামচিকা, ইঁদুর প্রভৃতি প্রাণীও ওদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে। ওদের কর্মচঞ্চলতা খুব বেশি থাকে ভোরে ও সন্ধ্যার ঠিক আগে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।