ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চা বাগান মাতাচ্ছে ‘সুরেলা কোকিল’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৮ ঘণ্টা, মে ৭, ২০২৪
চা বাগান মাতাচ্ছে ‘সুরেলা কোকিল’ গান গাইছে সুরেলা কোকিল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: ঠিক ‘গান’ নয়। গানের চেয়েও বেশি কিছু! এক নিশ্বাসে পাখিটি পাঁচ বার ডাকতে সক্ষম।

ভীষণ সুরেলা। ভীষণ মায়াময়। তারপর অল্পক্ষণের বিরতি। এরপর আবারও ডাকের প্রতিধ্বনি। কি অপূর্ব! সবুজ চা বাগানের উপত্যাকায় এই ডাকই যেন চির সুন্দরের অভিবন্দনা। চির ভালোলাগার অনবদ্য এক আকর্ষণ। এ ডাকেই যেন হৃদয় জুড়ায়!

আমরা যে কোকিলের ডাক শুনে খুব বেশি অভ্যস্ত – এই কোকিল সেই কোকিল কিন্তু নয়। বসন্তকালীন ওই কোকিলের ডাক শুনে শুনে আমরা কমবেশি সবাই তার ডাকটি মুখস্ত করে ফেলেছি। ওই কোকিলকে বলা হয় ‘কোকিল’ বা ‘এশীয়-কোকিল’। ইংরেজিতে Asian Koel বা Western Koel। এই কোকিকেরা আমাদের বসতবাড়ি, পাড়া-মহল্লা, শহর-গ্রাম সর্বত্রই থাকে।  কিন্তু ছবিতে যে কোকিল পাখিটিকে দেখা যাচ্ছে এর নাম ‘সুরেলা কোকিল’।

চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলের চা বাগান এলাকা থেকে এর ছবিগুলো তোলা হয়েছে। এর ইংরেজি নাম Plaintive Cuckoo এবং বৈজ্ঞানিক নাম Cacomantis merulinus। ‘সুরেলা কোকিল’ কে আবার  ‘করুণ পাপিয়া’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। তবে ‘সুরেলা কোকিল’ নামটি পুরাতন। তবে এর আরেকটি প্রাচীন নাম হলো ‘ছোট ভরাউ’। এরা অনেকাংশে বন, গাছপালা শোভিত বাগান এবং চা বাগান এলাকার পাখি। চা বাগান এলাকা সংলগ্ন নীরব স্থানগুলোতে এদের বেশি দেখা মেলে। এরা মানুষের অবাসস্থলের কাছাকাছি খুব একটা আসে না।

মঙ্গলবার (৭ মে) সকালে চা বাগানের ছায়াবৃক্ষের ডাকে বসে ‘সুরেলা কোকিল’ অপূর্ব সুরে ডাকছিল। ‘পী পী পী পীপিপিপিপি’ এমনই ডাকের সুমধুর ধ্বনি!  তখনই প্রতিবেদন উল্লেখিত ছবিগুলো ক্যামেরাবন্দি করা হয়। ‘সুরেলা কোকিল’ এর শারীরিক দৈর্ঘ্য ২৩ সেন্টিমিটার। আকারে আমাদের চিরচেনা পাখি ‘ভাত-শালিক’ থেকে একটু বড়।



ছেলে পাখিটির মাথা, ঘাড়, গলা ও বুক ধুসর। পিঠ ও ডানা কালচে। পেট ও লেজের নিচের অংশ কমলা। লেজের রয়েছে সাদা-কালো রঙের ডোরা। মেয়ে পাখির শরীর লালচে বাদামি এবং কালো ডোরা। কোথায় নেই শত্রুপক্ষ! সবস্থানেই রয়েছে। এই সুরেলা পাখির ক্ষেত্রেও তাই। ছেলে ‘সুরেলা কোকিল’ পাখিটি যখন স্পষ্ট ও সুমধুর শিসে ওর ধ্বনিসুধা প্রকৃতিতে ছড়াচ্ছিল তখনই শত্রুপাখি এসে ওর গায়ে আঘাত করে তাকে ওই স্থান থেকে তাড়িয়ে দিলো। মুহূর্তেই ছেদ পড়ল ওর বিরামহীন সুমিষ্ট ডাকের।
 
বেদনার কথা হলো, ‘সুরেলা কোকিল’ পাখিও কোকিলের মতো বাসা তৈরি করতে পারে না। শুধু তা-ই নয়, ডিমে তা দিয়ে ডিম ফুটানো এবং ছানাদের লালন-পালন করা কিছুই করতে পারে না। মেয়ে ‘সুরেলা কোকিল’ অন্যপাখির বাসায় লুকিয়ে ফিকে নীল রঙের ডিম পেড়ে সুকৌশলে পালিয়ে যায়।
 
এ যেন প্রকৃতির চিরবিস্ময়কর এক পদ্ধতি! অন্যপাখিরা সুরেলা কোকিলের সেই ডিমে দিনের দিন তা দিয়ে ছানা তুলে। এক সময় অন্য মা পাখিটি যখন বুঝতে পারে এই ছানাটি তার নয়, তবুও ছানাটিকে গাছের উপর থেকে ফেলে দেয় না। কিংবা ছানাটি খাবার খাওয়ানো বন্ধ করে দেয় না।  এভাবেই ‘অন্য মা’ এর হাত ধরে কোকিল ছানারা প্রকৃতিতে নির্ভরতার ডানা মেলে।   

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২৪
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।