ঢাকা, বুধবার, ২৩ পৌষ ১৪৩১, ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭ রজব ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

অবৈধ জালের ছড়াছড়ি, মেঘনায় ধ্বংস হচ্ছে ছোট মাছ-জীববৈচিত্র্য

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬, ২০২৫
অবৈধ জালের ছড়াছড়ি, মেঘনায় ধ্বংস হচ্ছে ছোট মাছ-জীববৈচিত্র্য মেঘনায় বেহুন্দি ও মশারি জাল দিয়ে ধরা হচ্ছে ছোট মাছ। ছবি: বাংলানিউজ

চাঁদপুর: চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে অবাধে ধরা হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ ও রেনু পোনা। নিষিদ্ধ বেহুন্দি ও মশারি জালে শীত মৌসুমে এক শ্রেণির জেলে এসব মাছ ধরার জন্য নদীতে বিচরণ করেন।

তারা প্রতিদিন কয়েক টন ছোট মাছ নদী উপকূলীয় আড়ত, মাছ বাজার ও পাড়া মহল্লায় বিক্রি করে। ফলে ধ্বংস হচ্ছে ছোট মাছসহ নদীর জীববৈচিত্র্য।

তবে মৎস্য বিভাগ বলছে খুব শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

গত কয়েকদিন জেলার মতলব উত্তর, সদর ও হাইমচর উপজেলার নদী উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদী পাড়ে বেহুন্দি ও মশারি জালসহ শত শত নৌকা।

বিশেষ করে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর, এখলাছপুর, আমিরাবাদ, সদর উপজেলার লালপুর, আনন্দ বাজার, যমুনা রোড টিলাবাড়ী, পুরাণ বাজার রনাগোয়াল, দোকনঘর, বহরিয়া, হরিণা ফেরিঘাট, আখনের হাট ও হাইমচরের চরভৈরবী এলাকায় এসব ছোট মাছ ও রেনু পোনা ধরা হয়।

খোঁজ নিয়ে এবং ছোট মাছ বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শুধুমাত্র শহরের পুরানবাজার হরিসভা এলাকায় রয়েছে প্রায় ৭০টি নৌকা। এসব জেলেদের নেতৃত্ব দেন রাসেল, লিটন গাজী, শাহজাহান গাজী ও কামাল ছৈয়াল নামের জেলে। তারা মতলব উত্তর উপজেলা থেকে মৌসুমের এই সময়টাতে এসব জেলেদের এনে ছোট মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত করেন।

মেঘনায় বেহুন্দি ও মশারি জাল দিয়ে ধরা হচ্ছে ছোট মাছ।  মেঘনার চাঁদপুর সদর বহরিয়া বাজার এলাকা থেকে তোলা ছবি

গত প্রায় ১৫ দিন বেলে পোনা, জাটকা, পোয়া, রিঠা, বাটা, চেওয়া, চিংড়ি পোনাসহ ছোট মাছগুলো বাজারে বেশি বিক্রি হচ্ছে। নদী উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও শহরের পুরান বাজার, লোহারপুল, পালবাজার, বিপনীবাগ, ওয়ারলেছসহ শহরের অলিতে-গলিতে এবং পাড়া মহল্লায় এখন ছোট মাছ বিক্রি হচ্ছে।

একাধিক ছোট মাছ ও রেনু পোনাবিক্রেতা জানান, সাগরপোনা নামে পাঁচমিশালি রেনু পোনা প্রতিকেজি বিক্রি হয় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, বেলে পোনা প্রতিকেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। আর চিংড়ি পোনা বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে।

সাগরের পোনা নামে বিক্রি হচ্ছে রেনু পোনা ও ছোট মাছ

শহরের কোড়ালিয়া রোডের বাসিন্দা সালমা জাহান ও বঙ্গবন্ধু সড়কের বাসিন্দা নাছির উদ্দিন বলেন, জেলেরা ভোরের দিকে এসব ছোট মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে আড়তে আসেন। দুপুর ১২টার মধ্যে তাদের এসব মাছ বিক্রি হয়ে যায়। তবে বাজারের দামের চাইতে ভ্যানগাড়িতে দাম কিছুটা কম।

হরিণাঘাট এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, মৌসুমের এই সময়টাতে মতলব উত্তর থেকে কিছু জেলে নিষিদ্ধ সব জাল নিয়ে এসে ছোট মাছ ধরে থাকেন। আমাদের এলাকার জেলেরা নিষিদ্ধ কোনো জাল ব্যবহার করেন না।

চরভৈরবী মাছঘাটের ব্যবসায়ী সম্রাট হাওলাদার বলেন, এ বছর নদীতে ইলিশ কম। এখন ছোট সাইজের বিভিন্ন মাছ আমাদের আড়তে বিক্রি হয়।

চাঁদপুর শহরের মিশন রোডস্থ শাহী মসজিদের সামনে সাগরের পোনা নামে বিক্রি হচ্ছে ছোট প্রজাতির মাছ।

হাইমচর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আশরাফুল হক বলেন, বেহুন্দি জাল দিয়ে মেঘনায় ছোট মাছ ধরা হয়, এমন খবরে আমরা অভিযান চালিয়েছি। আবারও অভিযান চালানো হবে।

চাঁদপুর সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মির্জা ওমর ফারুক বলেন, অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরা সব সময়ের জন্যই নিষিদ্ধ। খুব শিগগিরই আমরা কম্বিং অপারেশন শুরু করব। মৎস্য বিভাগ, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের সহায়তায় আমাদের অভিযান চলবে। ইতোমধ্যে একাধিক অভিযান হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০২৫
এসআরএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।