ফরিদপুর: সোনার বাংলার সোনালি আঁশ পাটের জীবন রহস্য উন্মোচন নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে হই-চই। এ নিয়ে তাই তোলপাড় বিশ্বসেরা পাটের উৎপাদন ভূমি ফরিদপুরের পাটচাষীদের মনেও।
স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট পাটের সিংহভাগ ফলনই হতো বৃহত্তর ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে। তবে দেশের সর্বোৎকৃষ্ট মানের পাট হিসেবে বৃহত্তর ফরিদপুরের পাটই ছিল সারা বিশ্বে সমাদৃত। সে সময়ের পরিসংখ্যান কৃষি বিভাগের কাছে না থাকলেও স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশেও মোট পাটের আবাদে এগিয়ে রয়েছে ফরিদপুর অঞ্চল।
![jute jute](../../../images/PhotoGallery/2013August/jute-120130827065829.jpg)
ঢাকার খামার বাড়ির উপ-পরিচালক (মনিটরিং) কৃষিবিদ রফিকুল হাসান জানান, বর্তমানে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় যে পরিমাণ জমিতে পাটের চাষ হয়, তার সমপরিমাণ হয় শুধু ফরিদপুর জেলাতেই। এর পরিমাণ ৭৫ হাজার হেক্টর।
তিনি জানান, জাতীয়ভাবে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা চলতি মৌসুমে ৭ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ অর্থাৎ বৃহত্তর ফরিদপুরেই আবাদ হয়েছে ২ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমিতে। ফলে দেখা যায়, পাটের আবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লেও এখনও বৃহত্তর ফরিদপুরে দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ পাটের ফলন হচ্ছে, যা দেশ তথা বিশ্বের সেরা মানের পাট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একযুগ আগেও ফরিদপুর অঞ্চলে উৎপাদিত হতো দেশের ৪০ শতাংশ সোনালি অাঁশ। তবে বিগত বছরগুলোতে দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কম-বেশি পাটের আবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকরা।
ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী, নগরকান্দা, সালথা, মধুখালী, ভাঙ্গাসহ ৯টি উপজেলায়ই উৎকৃষ্ট মানের তোষা পাট আবাদের ঐতিহ্য রয়েছে। ঢাকার খামার বাড়ির সূত্রমতে, দেশের সেরা মানের পাট উৎপাদনকারী জেলার স্থানটি এখনও দখল করে আছে ফরিদপুর।
![jute-2 jute-2](../../../images/PhotoGallery/2013August/jute-220130827070111.jpg)
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি ২০১৩-১৪ মৌসুমে ফরিদপুর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৭৫ হাজার হেক্টরে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮ লাখ ২ হাজার ২১২ বেল।
গত মৌসুমেও ফরিদপুরে ফলন হয়েছে ৮ লাখ ২১ হাজার বেল পাট। চলতি ও গত মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের উৎপাদন তার আগের মৌসুম অর্থাৎ ২০১১-১২ মৌসুমের চেয়ে অনেক বেড়েছে। সে মৌসুমে ফরিদপুরে পাটের ফলন হয়েছে ৬ লাখ ১৭ হাজার বেল পাট।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ভাষ্কর চক্রবর্তী বলেন, ফরিদপুর অঞ্চল নিম্নভূমি। বিল ও ডোবা-নালা বেশি থাকায় পাট চাষীদের পাট জাগ দিতে পানির তেমন অভাব হয় না। আর পানির প্রবাহ থাকায় পাটের মানও ভালো হয়।
ফরিদপুরের পাটকে ‘পৃথিবীর সেরা পাট’ অ্যাখ্যা দিয়ে ভাষ্কর বলেন, শিগগিরই আমাদের বিজ্ঞানীরা বর্তমানে প্রচলিত জাতের পাটের চেয়ে আরো ভালো, খরা ও বন্যাসহিষ্ণু এবং আরো কম সময়ে উৎপাদনক্ষম পাট উদ্ভাবন করবেন বলে আমরা আশাবাদী। তখন ফরিদপুর অঞ্চলের পাটচাষীদের সামনেও উন্মোচিত হবে নতুন দিগন্ত।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে প্রচলিত ভারতীয় জেআরও-৫২৪ এবং দেশি ও-৯৮৯৭, ও-৭২ জাতের পাটই দেশের সেরা মানের আসনটি যুগের পর যুগ দখল করে রেখেছে। যখন আরো ভালো জাতের পাট আসবে, তখন ফরিদপুরের পাটচাষীরা দেশের পাট উৎপাদনে আরো বড় ভূমিকা রাখবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৩
এসএফআই/এএসআর /আরকে