ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উপকূল থেকে উপকূলে

মহিষের দুধের দধি, উৎসব-পার্বনেও দামি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৩
মহিষের দুধের দধি, উৎসব-পার্বনেও দামি

4cxsapb5201উপকূল ঘুরে: মহিষের দুধের দধি আগাগোরাই লোভনীয়। দেশের সব স্থান এ দধি পাওয়া না গেলেও উপকূলের কিছু এলাকায় উৎসব-পার্বনে মহিষের দধি চাই-ই চাই।

বিয়ে বাড়ির নতুন অতিথির সামনে এ দধি পরিবেশন করতে না পারলে যেন সম্মানই চলে যায়।

ঈদ, পূজা ছাড়াও সব বড় অনুষ্ঠানে এ দধির বাড়তি কদর। আর এ ঐতিহ্য চলে এসেছে যুগ যুগ ধরে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপকূলের চরাঞ্চলে চরে বেড়ানো মহিষ থেকে আসে টনকে টন দুধ। কোনো রকমের মিশ্রণ ছাড়াই এ দুধ দিয়ে তৈরি হয় খাঁটি দধি।

মাটির হাঁড়িতে পাতা এ দধির ওপরের দিকে উঠে আসে প্রায় এক ইঞ্চি পুরু দুধের সারাংশ। ভিন্ন স্বাদের এ দধি চিনি কিংবা লবন মিশিয়ে খাওয়া যায়। কেউ ভাতের সঙ্গে খেতে পছন্দ করেন, কেউবা খালি। এক সময় শুধু উপকূলের নির্দিষ্ট এলাকায় এ দধি পাওয়া গেলেও এখন এর বাজার রাজধানী ছাড়াও দেশের বড় শহরগুলোতেই সুনাম ছড়িয়েছে।

সূত্র বলছে, উপকূলীয় জেলা ভোলা, পটুয়াখালী, লক্ষীপুর, নোয়াখালীর চরাঞ্চলে আছে অসংখ্য মহিষের বাথান। এসব বাথানে হাজার হাজার মহিষ চরে বেড়ায়। দধি তৈরির যোগানদাতা এসব মহিষ। মহিষের দুধ দিয়ে অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য তৈরি হলেও মহিষের দুধের এ দধি এখনো তার পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

কোনো ধরনের ভেজাল নেই, কেমিক্যাল নেই। বাথানের মহিষ থেকে পাওয়া দুধ সরাসরি হাঁড়িতে চলে যায়। বেলা দুটার দিকে হাঁড়িতে বসানো দুধ সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাত্র পাঁচ ঘণ্টার মধ্যেই দধিতে পরিণত হয়।
Milk
ভোলার দৌলতখান উপজেলা সদরে বেশ কজন মহিষের দুধের দধির কারিগরের দেখা মেলে বাংলানিউজ প্রতিবেদকের । এরা বাপদাদার আমল থেকে এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। কেউ চরাঞ্চলে মহিষের মালিকদের আগাম দাদন দিয়ে দুধ সংগ্রহ করেন, কেউবা মহিষের দুধের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে দধি তৈরি করেন।

দৌলতখান শহরের দধি ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী দুলাল চন্দ্র ঘোষ জানান, খাঁটি মহিষের দুধ দিয়ে দধি তৈরি হয়। এর মধ্যে কোনো ধরনের ভেজাল নেই। এ দুধ অনেক ঘন। তাই স্বাদ বেশি। এ দধিতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল নেই।

ভাদ্র-আশ্বিন-কার্তিক-অগ্রহায়ন মাসে মহিষের দুধ কম পাওয়া যায়। এ সময় দুধের কেজি একশ টাকা ছাড়িয়ে যায়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে দুধ বেশি হয়। এ সময় দুধ বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। তবে বিভিন্ন উৎসব-পার্বনে মহিষের দুধের দাম বাড়ে।

দৌলতখান বাজারে চরাঞ্চলের মহিষের বাথান থেকে হকারের মাধ্যমে প্রতিদিন দুধ আসে। এখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী এ দুধ সংগ্রহ করেন ব্যবসায়ীরা। কারো ব্যবসা দৌলতখান ছাড়াও ভোলা জেলায় সীমাবদ্ধ, কেউবা একটু ভালো দাম পাওয়ার আশায় মহিষের দুধের দধি ঢাকা, চট্টগ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন শহরে পাঠানো হয়। Milk-

একইভাবে চরাঞ্চল থেকে ভোলা, লক্ষীপুর, পটুয়াখালী, নোয়াখালীর শহর-বন্দরে পৌঁছায়। দধি ছাড়াও দুগ্ধজাত পণ্য তৈরির জন্য চলে যায় এ খাঁটি মহিষের দুধ।

৫০ বছর ধরে মহিষের দুধের দধি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ৭৫ বছর বয়সী মো. হাবিবুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, মহিষের দুধে তৈরি দধির চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। বেচাকেনাও বেশ ভালো। তবে বাজারজাতকরণে কিছু সমস্যা থাকায় এখানকার বেশিরভাগ দধি এখানেই বিক্রি হয়। বাইরের বাজারে পাঠানোর সুযোগ কম। এ ছাড়া সংরক্ষণেও সমস্যা আছে।

দধি তৈরির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, মোটামুটি পাঁচ সাইজের হাঁড়িতে দধি তৈরি হয়। স্থানীয় বাজারে ৪ কেজি ওজনের হাঁড়ি ৫০০ টাকা, ৩ কেজি ওজনের হাঁড়ি ৩৫০ টাকা, দেড় কেজি ওজনের হাঁড়ি ২০০ টাকা, এক কেজি ওজনের হাঁড়ি ১১০ টাকা এবং ৭৫০ গ্রাম ওজনের হাঁড়ি ৮০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে বাইরে এর দাম কিছুটা বেশি।

কে কবে মহিষের দুধ দিয়ে দধি তৈরির প্রচলন শুরু করেছিলেন, তা এখানকার কেউ বলতে পারেননি। তবে আদিকাল থেকেই স্থানীয়দের কাছে এর কদর ছিল। বয়সী ব্যক্তিরা সে রকমটাই জানালেন।

উপকূলের মহিষের দুধে আছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মহিষের দুধভিত্তিক কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে  তুলতে পারে। এর মাধ্যমে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে। ঐতিহ্যবাহী এ পণ্যের সুনাম ছড়াতে পারে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও।

সম্ভাবনার মাঝেও নানা সংকটের কথা শোনালেন সংশ্লিষ্টজনেরা। তারা জানান, মহিষ পালনে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম বেড়েছে। মহিষের খাবার কমে এসেছে। ঘন ও পুষ্টিকর দুধ পেতে ‘উড়ি’ ও ‘এলি’ জাতের ঘাস আর ‘চিরিঙা’ লতার উৎপাদনও কমে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৩
আরআইএম/এসএইচ/আরকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।