ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকিতে নারিকেল গাছ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৩
জলবায়ু পরিবর্তনে হুমকিতে নারিকেল গাছ

রাজশাহী: শিশির ভেজা সবুজ ঘাস। দুই ধারে সারি সারি নারিকেল গাছ।

এর মধ্য দিয়ে মেঠোপথ চলে গেছে গ্রামের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। নয়নাভিরাম এমন দৃশ্যের মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভাগীয় শহর রাজশাহীর প্রত্যন্ত বাগমারা উপজেলায় গ্রামের পথ চলার অভিজ্ঞতা দেড় যুগ আগের।

এখন প্রকৃতির আর সেই রূপ নেই। প্রচণ্ড খরা, অনাবৃষ্টি ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রাজশাহীর বাগমারা অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নারিকেল গাছ। এক সময় বাড়ির আঙিনায়, জমির পাশ দিয়ে সারিবদ্ধ নারিকেল গাছ সৌন্দর্যের যেমন শোভা ছড়াতো, তেমনই দিত সুস্বাদু ফল। কিন্তু কালের বিবর্তনে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে বাগমারাসহ রাজশাহীর আশপাশের উপজেলা এলাকায় অতিরিক্ত খরা ও পানি শূন্যতায় বিলুপ্ত হতে বসেছে এই নারিকেল গাছ।
coconut-tree
নারিকেল খুবই সুস্বাদু ফল। ডাব পুষ্ট হয়ে নারিকেলে পরিণত হয়। ডাবে প্রচুর পরিমাণ পটাসিয়ামসহ ওষুধি গুণ রয়েছে। তৃষ্ণা মেটাতে ডাবের বিকল্প নেই। সব মিলে এ এলাকায় ডাব-নারিকেলের বিশেষ কদর। বিগত দশকে নারিকেল গাছগুলো সব থেকে বেশি ফল দিত।

বর্তমানে জলবায়ুর পরিবর্তনে গাছগুলো ক্রমান্বয়ে ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। গাছগুলোর দুর্বলতার কারণে ফল ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। আগে নারিকেল গাছে বারো মাসই ডাব-নারিকেল পাওয়া যেত। বর্তমানে বর্ষা মৌসুম ছাড়া তেমন ডাব চোখে পড়ে না। আগে এলাকায় সারিবদ্ধভাবে লাগানো প্রচুর নারিকেল গাছ ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে গাছ মরে যাওয়ায় সারিবদ্ধ নারিকেল বাগান আর তেমন নেই। দু’একটি বাগান থাকলেও জলবায়ুর প্রভাবে গাছগুলো দুর্বল হয়ে আর ফল দিচ্ছে না।  

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে রাজশাহী অঞ্চলে অতিরিক্ত খরা ও অনাবৃষ্টির প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে। দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তনে নির্ধারিত মৌসুমে এলাকার নদ-নদীতে পানি থাকছে না। গত কয়েক বছর ধরে বৃষ্টির পরিমাণ কমতে কমতে গত দু’বছর থেকে প্রায় বৃষ্টি নেই বললেই চলে।

এবার দেশের অন্যান্য এলাকায় বৃষ্টি বন্যা হলেও এ এলাকায় আষাঢ়ের শেষে ভাদ্র মাসেও বৃষ্টির দেখা মেলেনি। সেচ পাম্প চলছে ফসলি জমিতে। কিন্তু তেমন সুযোগ নেই বাড়ির আঙিনায় কিংবা বাড়ির পতিত জমিতে সেচ ব্যবস্থার। এতে বৃষ্টির অভাব অতিরিক্ত খরা ও পানি শূন্যতায় নারিকেল গাছগুলো শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। এ এলাকায় কোনো সময় নারিকেল গাছ বর্ষায় কিছুটা তরতাজা হলেও অন্য সময় পানির অভাবে গাছগুলো নুয়ে পড়ে। অতিরিক্ত খরায় রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় গাছ।

শীতের সময় ঘনকুয়াশা আর গ্রীষ্মের খরায় নারিকেল গাছ রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। ৯০ ঊর্ধ্ব বয়সী বালানগর গ্রামের আহসান উল্লাহ জানান, এক সময় গ্রামে গ্রামে প্রচুর নারিকেল গাছ ছিল। তাতে প্রচুর ডাব ও নারিকেল পাওয়া যেত। বেশ কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত খরায় গাছগুলো শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। আর যেগুলো এখন রয়েছে তা ক্ষীণ ও রোগাক্রান্ত। তাতে ডাব তেমন ধরে না। ফলে গাছগুলো অপ্রয়োজনীয় মনে করে তার গ্রামের অনেক মানুষ নারিকেল গাছ কেটে ফেলছে।

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. সামস-ই-তাবরিজ বলেন, পরিমিত বৃষ্টি ও আবহাওয়া ভালো হলে নারিকেল গাছ ভালো ফলন দেবে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত খরা ও শীতে ঘন কুয়াশার কারণে নারিকেল গাছ কোল্ড ইঞ্জুরিতে আক্রান্ত হয়। এতে বেশ কিছু নারিকেল গাছ মারা গেছে।

আগামীতে বৈরী আবহাওয়া না হলে গাছ ও ফল দুটিই রক্ষা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন,  জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাধারণতঃ প্রকৃতি থেকে নারিকেল গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। শুষ্ক অঞ্চল নয়, এমন স্থানে নারিকেল গাছ ভালো হয় এবং অধিক ফল দেয়। কিন্তু রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল এমনিতেই শুষ্ক। খরায় তা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় শূন্য। যার প্রভাবে রাজশাহীর বাগমারাসহ আশপাশের উপজেলায় নারিকেল গাছ মরে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৩
এসএস/এএ/বিএসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।