ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

কাঁদছে রাজাখালী-চাকতাই খাল!

ফটো: উজ্জ্বল ধর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট ক্যাপশন স্টোরি: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৩
কাঁদছে রাজাখালী-চাকতাই খাল!

মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলেছিলেন, ‘...বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ-দলে,/ কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?/ দুগ্ধ-স্রোতোরূপী তুমি জন্মভূমি-স্তনে...’। কবিতার ভাষ্যের মতো নিঃসন্দেহে নদী-খাল ‘দুগ্ধ-স্রোতরূপী’ হয়ে ‘স্নেহের তৃষ্ণা’ মিটিয়ে গেলেও মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ! যে নদী-খালে নাওয়া-খাওয়া, সে নদী-খালেই প্রতিনিয়ত বিষ মিশিয়ে চলেছে, থামিয়ে দিচ্ছে তার স্বচ্ছপ্রবাহ!


মানুষের এমনই নির্মম-নিষ্ঠুরতার শিকার চট্টগ্রামের রাজাখালী খাল! এক সময় এই খালেরই স্বচ্ছ পানির স্রোতধারার কূল ঘেষে গড়ে ওঠে নগরীর বাণিজ্যিক এলাকা খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, চাকতাই।

অথচ, এখন এই খাল দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে এলাকার সকল শিল্প কারখানার বর্জ্যরূপী বিষ। ফলে, নষ্ট হয়ে কালো রঙ ধারণ করেছে রাজাখালীর পানি।


শুধু বর্জ্য নিঃসরণ করেই ক্ষান্ত নয় অকৃতজ্ঞ মানুষ। দখল হয়ে গেছে একসময়ের ভরা যৌবনা রাজখালী’র দুই তীরও।


রাজখালী খালের মতোই মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার নগরীর চাকতাই খালও। ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকে শুরু হয়ে এই খাল দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নৌবাণিজ্য চলছে এখনও।


তবে, ব্রিটিশ শাসনের মতো নৌবাণিজ্য অব্যাহত থাকলেও নেই সে সময়কার স্বচ্ছ জলের ধারা, নেই সেই বিশুদ্ধ বাতাস! চাকতাই খালে এখন কেবলই ফুসফুস সংক্রামক দুর্গন্ধ আর কালো বর্ণের বর্জ্য ধারা।


দখলদাররা দখল করে নিয়েছে চাকতাই’র দুই তীরও। বর্জ্য জমে তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জলপ্রবাহে ব্যাঘাত ঘটার কারণে বর্ষাকালে চাকতাই উপচে লোকালয়ে পানি যাওয়ায় এটিকে এখন ‘চট্টগ্রামের দুঃখ’ই বলা হয়।


কিন্তু দুঃখ কি চাকতাই কিংবা রাজাখালীরও কম? শতো বছর ধরে মানুষকে জীবন যাপনের উপাদান যুগিয়ে যদি সেই মানুষের পক্ষ থেকেই ‘আঘাতের পর আঘাত’ সহ্য করতে হয়, তার চেয়ে বেশি দুঃখ আর কীসে?


রাজধানীর বুড়িগঙ্গার ‘পরিণতি’র খবরে এখন রাজাখালী-চাকতাই খালও কাঁদছে। ‘মরাখাল’ হয়ে যাবে এই পরিণতি ভেবে নয়, ‘দুগ্ধ-স্রোতরূপী’ হয়ে যে মানুষের ‘স্নেহের তৃষ্ণা’ মিটিয়েছে সেই ‘মানুষের’ কী হবে? যে মানুষ তার বুক বেয়ে জীবন-জীবিকার রসদ বইয়ে নিয়েছে, তাদের কী হবে? যে মানুষ তার বুকের জলে নাওয়া-খাওয়া সেরেছে, তাদের কী হবে?


কেবল রাজাখালী ও চাকতাই খালই যেন কাঁদছে না, কাঁদছে চট্টগ্রাম নগরী, চট্টগ্রামের পরিবেশ, কাঁদছে বিশ্বও। ‘পরিবেশ বিপর্যয়’র পরিণতি ভেবে, ‘অকৃতজ্ঞ মানুষের’ পরিণতি ভেবে!

বাংলাদেশ সময়: ০৬২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০১৩
এইচএ/এনএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।