ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চা শ্রমিকের যেখানে ঠাঁই

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৬
চা শ্রমিকের যেখানে ঠাঁই  ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) : স্পষ্টই গণনা করা যাচ্ছে বুকের হাড়গুলো! শার্টহীন নগ্ন শরীরজুড়ে দারিদ্রের গাঢ় প্রলেপ। যা তাকে আলাদা করে রেখেছে সবার থেকে।

এর সাথে রয়েছে ক্লান্তির বিন্দু বিন্দু বিস্তৃত ঘাম।

তার শরীরের এই কালচে-তামাটে রঙটি যত না তার আপন শরীরের নিজস্ব রঙ, তার চেয়ে অনেক বেশি একটি ইঙ্গিতবাহক - বছরের পর বছর ধরে তীব্র রোদ্রে পুড়ে যাওয়া দারিদ্রপিষ্ট  চা-শ্রমিকদের জীবনের প্রতিটি অজানা অধ্যায়ের।

যে চা শ্রমিকদের শ্রমে নির্মিত আমাদের আয়েশে পান করা ‘চা’ প্রতিটি চুমুকে অতুলনীয় অনুভূতির জন্ম দেয় – সেই শ্রমিকরাই বাসস্থান সংকটের শিকার। একটি ঘরে মাঝারি আকারের ঘরে গাদাগাদি করে আট-দশ জনের এই বেশ ভালো থাকা!

শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত ফিনলে চা কোম্পানির লাখাইছড়া চা বাগানের শ্রমিক আমিন ভূমিজের একটি মাটির ঘর তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে তিনি একা নন। রয়েছেন একজন কারিগরও। তিনি কারিগরের সহযোগী হয়ে নিজের ঘর তৈরির কাজে নেমেছেন। সম্প্রতি লাখাইছড়ার মেডিকেল লাইনে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা গেছে।

মাটির ঘর একটি পরিবেশবান্ধব গৃহ। স্থাপনাশৈলীতেও তার রয়েছে ব্যাপক ভিন্নতা ও চাহিদা। পর্যটকদের অস্থায়ী অবাসন হিসেবে এটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কিন্তু চা শ্রমিকদের এই মাটির ঘরগুলো তেমন নয়! এগুলোতে কোনোক্রমে দিবসরজনী পার করা মাত্র!

এই কাদামাটির ঘরেই চা শ্রমিকদের ঠাঁই! একদিন বা একমাস নয়; বছরের পর বছর! যুগের পর যুগ! তবে কেউ কেউ পাকাঘরে বসবাসের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। অবশ্য তা হাতে গোনা।

ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা ঠিকঠাক করতেই আমিন এবং তার বাড়ি তৈরির কারিগর লজ্জার হাসি হেসে ততক্ষণে শার্ট পরে ফেলেছেন। পুনরায় তাদের শার্ট খুলিয়ে পাঁজরের হাঁড়গুলোর ছবি তুলে বাহাবা নিতে একদমই মন মানলো না।

বাগান থেকে ঘর তৈরির কোনো সাহায্য পাওয়া যায় কি না? এ প্রশ্নের উত্তরে আমিন ভূমিজ কিছুটা হতাশার সাথে জানালেন, কোম্পানি থেকে মাত্র কিছু টিন আর দরজা দেয়। অতিরিক্ত টিনগুলো, মাটির দেয়াল এবং কারিগর নিয়োগ সব নিজের ক্রয় এবং জোগাড় করতে হয়।

মাটির ঘর নির্মাণের খরচ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার এ ঘরটি ছয় ফুট এবং পনের ফুটের। এ ঘরটিতে আমার ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

মাটির ঘর তৈরির বিষয়ে কারিগর অরুণ মহালি বলেন, প্রথমে মাটি খুঁড়ে ড্রেন তৈরি করতে হয়। তারপর সেই ড্রেনে নতুন মাটি দিতে হয়। যে কোনো মাটি হলে হবে না; হতে হবে আঠা জাতীয় মাটি। তারপর ধীরে ধীরে কাদামাটি ভরে ভরে দেয়াল তুলতে হয়। প্রায় দুমাস সময় লাগে।

তিনি আরো বলেন, একেকটা মাটির ঘর তৈরিতে নয় ফুট করে পাঁচ-ছয় বান টিন লাগে। একটি বান সমান আটটি টিন। ভালো মতো ঘর তৈরি করলে একটি মাটির ঘর প্রায় পঞ্চাশ থেকে সত্তর বছর পর্যন্ত টেকসই হয়।

কথা বলতে বলতে এক সময় থেমে গেলেন আমিন। কিছুটা গম্ভীর দেখাচ্ছে তাকে। ভারি কণ্ঠে বললেন, আমাদের এইসব কথা-টথা লিখিয়ে বিপদে ফেলবেন না তো বাবু? আমি যথাসধ্য বিপদের না ফেলার প্রতিশ্রুতি দিলাম।

পুনরায় ঘরের প্রসঙ্গ আসতেই আমিন বলে উঠলেন, ‘একটা তো আমাদের স্বপ্নের প্রসাদ আছে বাবু! যেখানে বউ-বাচ্চাদের নিয়ে দিন কাটাবো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৬

বিবিবি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।