ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সবুজ পৃথিবী লাল হচ্ছে বড় বেশি অত্যাচারে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৬
সবুজ পৃথিবী লাল হচ্ছে বড় বেশি অত্যাচারে ছবি: সংগৃহীত

বড় বেশি অত্যাচারে ক্রমেই লাল হয়ে উঠছে আমাদের প্রিয় এই সবুজ পৃথিবী। এটা মোটেই আগস্ট এরই মধ্যে আমরা এ বছরের কোটা পূরণ করে ফেলেছি।

পৃথিবী নামের ভূ-গোলকের যতটুকু দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তার চেয়ে বেশি আমরা নিয়ে ফেলেছি আগস্টের গোড়াতেই। এখনো রয়েছে পাঁচ-পাঁচটি মাস। বাকি যা কিছু আমরা এই পৃথিবী থেকে নেবো তা হবে ভবিষ্যত প্রজন্ম থেকে নেওয়া ঋণ। সেই ঋণ শোধ করা যাবে কবে তার কোনই হিসাব কষতে পারছেন না পরিবেশবিদরা। ফলে পৃথিবী বা প্রকৃতি যখন নিজেই তার প্রতিশোধ নেবে তখন মানুষ হয়ে পড়বে আরও অসহায়।  

মানুষ তার চাহিদা পূরণের পথে পৃথিবীকে প্রতিবেশগতভাবে অক্ষুণ্ন রেখে চলাই কাজ। কিন্তু ১৯৭১ সালের পর থেকে এটা আর সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিবছরই বছর শেষ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর দেওয়ার ক্ষমতা। এরপর বাকি সময়টা মানুষ পৃথিবীর ওপর সৃষ্টি করছে বাড়তি চাপ। আর তাদের সবুজ পৃথিবী ক্রমেই লাল হয়ে উঠছে। গত ৭ আগস্ট শেষ হয়ে গেছে চলতি বছরের কোটা। ২০১১ সালে এই কোটা পূরণ হয়ে যায় ১১ আগস্ট। যে দিনটিতে এই কোটা সমাপ্ত হয় সে দিনটিকে ‘আর্থ ওভারশুট ডে’ হিসেবে চিহ্নিত করেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। বছরের এর আগের দিনগুলো পৃথিবী সবুজ থাকলেও এর পরের দিনগুলোতে লাল হিসেবে বিবেচনা করেন তারা। সেই হিসেবে চলতি বছরের বাকি ১৪৬ দিন একটি লাল পৃথিবীতেই হবে আমাদের বসবাস।

এর মধ্য দিয়ে হরবছর আমাদের প্রতিবেশগত ঋণের পরিমান বাড়ছে। আর আমরা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছি সবুজ পৃথিবী সংরক্ষণে।  

যে জঙ্গিবাদকে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তার চেয়েও অনেক বড় সমস্যা হয়ে পৃথিবীতে বিরাজ করছে এই জলবায়ূ সমস্যা।  

গবেষকরা বলছেন, ২০১৬ সালে পৃথিবীর দেওয়ার ক্ষমতার সবটুকু আমরা ব্যবহার করে ফেলেছি। বাকি সময়টিতে আমরা ধার করে চলবো যার ভাগীদার মূলত ভবিষ্যত প্রজন্ম।  

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ড বিষয়টি নির্দেশ করে বলেছে, এ বছর ওভারশুট ডে হয়ে গেলো এমন এক দিনে যা পৃথিবীতে কোনও কালে আর কখনোই হয়নি। গত হিসাবেরও পাঁচ দিন আগে। আর এতে নির্দেশ করে পৃথিবী তার মানুষদের ভরন-পোষণ দিতে ক্রমেই অপারগ হয়ে উঠছে। ফলে প্রতিদিনই আমরা প্রতিবেশের কাছে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছি।  

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্ক নামের একটি থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান ১৯৭০ এর দশক থেকে এই আর্থ ওভারশুট ডে’র হিসাব রেখে আসছে। তাদের হিসাবে ১৯৭১ সালের ২৪ ডিসেম্বর এই দিনটি চিহ্নিত হয়। সে বছর বিশ্বে ঘাটতি দেখা দেয় মাত্র ৬ দিনের। ১৯৭৬ সালে দিনটি ছিলো ১৯ নভেম্বর ১৯৮১ সালে তা ছিলো ১৩ নভেম্বর, যা ১৯৮৫ সালে ১ নভেম্বরে দাঁড়ায়। এই বছর বিশ্বকে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছ থেকে ধার করা সম্পদে দুটি মাস চলতে হয়। ১৯৯১ সালে আর্থ ওভারশুট ডে হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১২ অক্টোবরকে, ১৯৯৬ সালে যা দাঁড়ায় ৪ অক্টোবর আর ২০০১ সালে নতুন শতাব্দী শুরুর পর ৩ মাস ৪ দিনের ঋণ করে টিকে থাকে বিশ্ব। ২০০৬ সালে আর্থ ওভারশুট ডে হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ২৪ আগস্টকে। সেবার মাত্র পাঁচ বছরেই বেড়ে যায় প্রায় এক মাসের ঋণ। আর ২০১১ সালে ১১ আগস্টকে চিহ্নিত করা হয় আর্থ ওভারশুট ডে হিসেবে।  

মূলত গত প্রায় এক দশক ধরে গোটা বিশ্বে জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আন্দোলন বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে। আর বিশ্বের দেশে দেশে শুরু হয় ব্যাপকভিত্তিক প্রচার প্রচারণা। বিশ্বের প্রধান প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর ওপরও চাপ বাড়তে থাকে। ধারণা করা হচ্ছিলো এই পাঁচ বছরে ঋণের বোঝা ঋণাত্মাক গ্রাফের দিকে যাবে। কিন্তু সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ করে দিয়ে দিনটি নির্ধারিত হয় ৭ আগস্ট তারিখে। তবে ব্যর্থ হলেও পরিবেশ প্রতিবেশ সুরক্ষায় বিশ্ব যে এগিয়ে তা পাঁচ বছরের মেয়াদে মাত্র পাঁচদিনের ব্যবধান থেকে চিহ্নিত করা যায়। কারণ এর আগের যে কোনও পাঁচ বছরেই এই ব্যবধান ছিলো সর্বনিম্ন ৮ দিন থেকে সর্বোচ্চ ২৮ দিন।   

ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান আর বিশ্বের দেশে দেশে পরিস্থিতি পাল্টানোর চেষ্টা চলছে। ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে কার্বন নিঃসরনের মাত্রা ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার হবে। আর যদি তা সম্ভব হয় তাহলে ওই বছর নাগাদ ওভারশুট ডে ফের একমাস পিছিয়ে যাবে।  
যতদিন আমাদের এই মনে হবে যে, পৃথিবীতে সম্পদের পরিমান অফুরাণ ততই আমরা পৃথিবীটাকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেবো। সুতরাং আমাদের সজাগ হতে হবে এবং প্রতিটি মানুষকে এই বিপর্যয়ের হাত থেকে পৃথিবীটাকে রক্ষা করতে হবে।  

কিভাবে সে প্রশ্নও উঠেছে। আর উত্তর হিসেবে আসছে আমাদের মাংসে নয় সব্জিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে। বলা হয় এক টন মাংস উৎপাদনে পৃথিবীর যে পরিমান জৈবিক উৎপাদন ব্যবস্থার ব্যবহার চলে তার চৌদ্দভাগের এক ভাগ ব্যবহার করে ১ টন সব্জি উৎপাদন করা সম্ভব।  

বিশ্বের যত গবাদি পশু রয়েছে সেগুলোও মোট কার্বন নিঃসরণের ৯ শতাংশের জন্য দায়ী।  

বিদ্যুত উৎপাদনের কারণে নিঃসরণ ঘটে ৩৮ শতাংশ কার্বন। আর ঘর গৃহস্থালীতে ব্যবহৃত হয় মোট বিদ্যুতের ৩০ শতাংশ। সুতরাং বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে। আর তা অনেকগুলো পথেই সম্ভব। এনার্জি সেভিং বাল্ব ব্যবহার, সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার যার অন্যতম।
কাগজ তৈরির জন্য কেবল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবছর ১০০ কোটি গাছ কাটা হয়। সুতরাং কাগজের ব্যবহার কমাতে হবে। ঘরে কিংবা অফিসে কাগজের ব্যবহার কমাতে পারলে এসব কাছ রক্ষা করা সম্ভব, যা পরিবেশ রক্ষা করবে। কোনও কিছু প্রিন্ট করার আগে একবার ভাবুন। প্রয়োজন হলে কাগজের দুই দিকেই প্রিন্ট করুন। আর সবসময় রিসাইকেলড পেপার ব্যবহার করুন।

আরেকটি প্রধান কার্বন নিঃসরনকারী হয়ে যানবাহন। যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ শতাংশ নিঃসরণ ঘটে যানবাহন থেকে। কিন্তু আপনি যদি হেঁটে চলে যেতে পারেন, বিকল্প পরিবহন হিসেবে বাইসাইকেল ব্যবহার করতে পারেন তাহলেই এই নিঃসরন কমে আসবে।

বাংলাদেশ সময় ১০০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।