ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চরম প্রজনন সংকটে ‘ল্যাঞ্জা রাতচরা’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪১ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
চরম প্রজনন সংকটে ‘ল্যাঞ্জা রাতচরা’ দুই ছানার সঙ্গে ল্যাঞ্জা রাতচরা, ছবি: ইনাম আল হক

মৌলভীবাজার: পাখির ছানারা তাদের মায়ের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। ডিম পাড়া থেকে তা দিয়ে ছানা ফোটানো এবং তারপর সেগুলোকে খাইয়ে-দাইয়ে বড় করে তোলার মাঝে মা পাখিদের রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম। বন্য পরিবেশে পারিপার্শ্বিক সব ধরনের শত্রুর হাত থেকে নিজের ছানাকে রক্ষা করাও মা পাখিদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।

শত শত বছর ধরে পাখিরা এ চ্যালেঞ্জ গভীর মমতায় অসীম ধৈর্য্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে প্রজনন ও বংশধারাকে টিকিয়ে রেখেছে।

জীবনের গভীর ঝুঁকি নিয়ে ছানাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে মা পাখিরাই।



তবে দেশজুড়ে বন ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্রমশ বিপন্ন হওয়ায় কিছু কিছু পাখির টিকে থাকাটা এখন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ছানা তুলতে না পারায় ক্রমশই বিপন্ন হয়ে পড়ছে এসব বনের পাখিরা।

বিপন্ন এই পাখিদের একটি ‘ল্যাঞ্জা রাতচরা’  (Large-tailed Nightjar)।

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশে মাটিতে বাস করা পাখিদের মধ্যে ‘ল্যাঞ্জা রাতচরা’  একটি। মাটিতে বসবাস করা পাখিদের অবস্থা আজ খুবই খারাপ। কারণ, আমাদের দেশে নিরাপদ মাটি নেই। বিশেষ করে দেশের ‘সুলভ আবাসিক পাখি’ হলেও বিপন্ন ল্যাঞ্জা রাতচরা’।

‘নিরাপদ মাটি মানে নির্জন অবস্থান বা যেখানে মানুষসহ অন্য পশু-পাখির উপস্থিতি নেই। শিশু থেকে মানুষ বা বিভিন্ন পশুর উপস্থিতি সত্বেও ল্যাঞ্জা রাতচরা একদম মাটির ওপরে বাসা করে চিরকাল ধরে ছানা ফুটিয়ে আসছে। কিন্তু এখন আর পারছে না। নিরাপদ মাটির অভাবে জীবন অত্যন্ত সংকটাপন্ন হয়ে গেছে তার’।
ল্যাঞ্জা রাতচরার ডিম, ছবি: ইনাম আল হক
‘যখন পৃথিবীতে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণী কম ছিল, তখন থেকে তারা এভাবেই বংশবিস্তার করে এসেছে। এ অভ্যাস তো আর বদলাতে পারবে না। তাই অতি সংকটেই কাটছে তার জীবন’- বলেন ইনাম আল হক।

তিনি আরো বলেন, ‘পোকা-মাকড় ধ্বংস করে পোকা খাওয়া পাখিদের জীবন তো এমনিতেই আমরা শেষ করে ফেলেছি। ল্যাঞ্জা রাতচরাও একটি পোকা খাওয়া পাখি। খাদ্য সংকটের পরেই রয়েছে তার প্রজনন সংকট। মাটিতে হলেও নানা কারণে তার ডিমটি টিকছে না। কোনোমতে ডিম থেকে ছানা ফুটলেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু ওই ছানাটিও টেকে না। এমনই চরম অবস্থা তাদের’।

তিনি বলেন, ‘ল্যাঞ্জা রাতচরার ছানা বড় না হওয়া পর্যন্ত পুরো দুই মাস তাকে বন-জঙ্গলের মাটিতেই বসে থাকতে হয়। কিন্তু আজ এমন নির্জন-নির্ঝঞ্ঝাট বন-জঙ্গল কোথায়? একটি বনবিড়াল এলেই শেষ! একটি কুকুর এলেই শেষ!’

অন্যান্য দেশে এর অবস্থান সর্ম্পকে ইনাম আল হক বলেন, ‘পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তারা ভালোই আছে। এজন্য যে, সেখানে অনেক পতিত জমি থাকায় নির্ঝঞ্ঝাট জীবন কাটাতে পারে তারা। তাছাড়া পর্যাপ্ত খাদ্য সম্ভারও রয়েছে। ওখানে কেউ পোকা-মাকড় দমনের কীটনাশক ওষুধও ছিটাচ্ছে না’।

‘সারাদিন তারা মাটিতেই থাকে, মাটিতেই ঘুমায়। প্রজনন সময়ে মাটিতেই বাসা তৈরি করে ডিম পেড়ে তা দিয়ে ছানা ফোটায়। ছেলেপাখিটি খাবার এনে তা দিতে বসা মেয়েপাখিটিকে খাওয়ায়। আবার মাঝে মাঝে ছেলেপাখিটিও ডিমে তা দেয়’।

ল্যাঞ্জা রাতচরার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩ সেন্টিমিটার। এরা প্রশস্ত লেজের নিশাচর পাখি। ভোরে এবং গোধূলিতে এরা বেশি তৎপর থাকে ও ডাকাডাকি করে। রাতে বন, তৃণভূমি ও শষ্যক্ষেতের ওপর উড়ে উড়ে পোকা খায়। দিনের বেলা কবরস্থান, বনের রাস্তা, ঝরাপাতার ওপরে অথবা গাছের কাণ্ডে বুক লাগিয়ে ঘুমায় বলেও জানান পাখি বিজ্ঞানী ইনাম আল হক।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
বিবিবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।