গাছেরা খুঁজে পাবে তাদের আপন ঠিকানা। জন্ম-জন্মান্তরের নাড়ির বন্ধন শেকড় ছড়াবে মাটির গহ্বরে।
এ ষাটটি শিশু গাছকে মাটির মাঝে স্থাপনের দায়িত্বটি পেয়েছেন ইউনুস মিয়া। বয়স প্রায় সত্তর বছর। এই বয়সে অনেকটাই তারুণ্যময় তিনি। জঙ্গল পরিষ্কার, মাটি খোঁড়া, গাছ রোপণ সবই চলে তার নেতৃত্বে। মজিদ মিয়া ও সলিমুল্লাহ নামে দু'জন সহযোগী রয়েছে তার। তাদের হাত দিয়েই শিশু গাছগুলো পেলো চিরদিনের ঠিকানা।
ইউনুস মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘বৃক্ষরোপণ করতে আমার খুব ভালো লাগে। আমি তেইশ বছর ধরে বন বিভাগের সঙ্গে গাছ লাগানোর কাজ করে আসছি। প্রতি বছর লাখ খানেক চারা রোপন করি’।
‘ এ পেশায় না এসে যদি অন্য পেশায় যেতাম, তবে হয়তো আয়-রোজগার ভালোই হতো। কিন্তু গাছের প্রতি মায়ায় এ পেশাটি ছাড়তে পারি না। আমি একজন থাকবো না, কিন্তু আমার হাতে লাগানো এই গাছগুলো থেকে যাবে’।
‘আমাকে দিয়ে যদি একজন উপকৃত হন, তবে এর মতো বড় আনন্দ আর কি আছে? গাছ রোপণ বড় উপকারের মতো’- কিছুটা আবেগাপ্লুত হয়ে বলতে থাকেন ইউনুস।
ততোক্ষণে তার ব্যস্ততা বেড়ে গেছে চারা রোপণের। টিলা বেয়ে মাঝে মাঝে উঠছেন, আবার নামছেন।
ইউনুস মিয়া বলেন, ‘এই এসিএফ তবিবুর স্যার যদি আরো আগে আসতেন, তবে লাউয়াছড়ার বন এভাবে ধ্বংস হতো না। তিনি লাউয়াছড়ায় থাকলে এখানকার বন আবারও গভীর হয়ে উঠবে’।
‘গাছ লাগাতে গিয়ে ইতা কত জোকে আমরারে খায়...(এগুলো কতো জোঁকে আমাদের কামড়ায়)’- বলেন তিনি।
শুক্রবার (১৬ জুন) সকালে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের স্টুডেন্ট ডরমেটরির পাশের টিলায় বাংলানিউজের উদ্যোগে এ বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। এবার প্রথম কিস্তিতে মোট ষাটটি ফলদ বৃক্ষরোপণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে কয়েক হাজার গাছ রোপণ করা হবে।
এর আগে গত ২৭ মে লাউয়াছড়ার বাগমারা পিকনিক স্পটে আরও শতাধিক ফলদ বৃক্ষরোপণ করা হয়েছিল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দেশের অনলাইন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন।
উপস্থিত ছিলেন বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো, মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণি রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমান এবং বাংলানিউজের সুহৃদ আবু সিদ্দিক মো. মুসা।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, লাউয়াছড়ার মূল্যবান প্রাণিসম্পদ রক্ষা ও বিস্তারে বাংলানিউজের এ উদ্যোগটি অনুকরণীয় এবং ইতোমধ্যে স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রশংসা অর্জন করছে। সুস্থ পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার লক্ষ্যে সবুজের বিস্তারে বাংলানিউজ এভাবেই অবদান রেখে যাবে বলেও আশাবাদ তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭
বিবিবি/এএটি/এএসআর