প্রতিটি গাছের খাদ্যসম্ভারের নিশ্চয়তা দান করে সূর্যালোক। বিশাল বৃক্ষ থেকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তৃণ সবাইকেই বিলিয়ে দেয় বেঁচে থাকার সঞ্জীবনী সুধা।
জন্মজন্মান্তর ধরে পর্যাপ্ত সূর্যালোক আর বৃষ্টিধারা দুটোর কাছে সুগভীর ঋণী প্রতিটি ছোট-বড় অরণ্যভূমি। এ দায়বদ্ধতাটুকুর মাঝেই প্রকৃতির নিবিড় সজীবতা লুকায়িত।
যেদিকে চোখ যায় শুধুই গাঢ় সবুজের গভীর সৌন্দর্য। বিরল প্রজাতির শতসহস্র গাছপালা আর শতকোটি অজানা লতাগুল্মের গাঢ় সমারোহ। এভাবেই বিস্ময়কর ভালোলাগার জন্ম দিয়েছে এখন লাউয়াছড়া।
ওরা একে অপরের গায়ে দারুণভাবে লেপ্টে আছে! মিশে আছে নিজেদের মতো করে। একটি লতাগুল্মকে টান দিলে ভালোবেসে ওর গায়ে আটকে থাকা অন্য লতাগুল্মটিও কাছে চলে আসে। যেন নিঃশব্দের প্রশ্নবান ছুঁড়ে দেয় – কেন ডেকেছেন?
এ যেন তাদের আকাশ ছোঁয়ার প্রাকৃতিক প্রতিযোগিতা! কে কার আগে লম্বা হবে, দীর্ঘ হবে - আকাশের দিকে থেকে ধেয়ে আসা সূর্যালোকটুকুকে গায়ে মাখার জন্য।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা থেকে ফেরার পথে লউয়াছড়ায় হৃদয় আকুল করা সবুজের সমারোহ খুঁজে পাওয়া গেলো। পাকা রাস্তার দু’ধার একেবারে ঘন গভীর। এটাই তো আমাদের প্রাকৃতিক বন। এমন রূপই তো প্রতিটি বনের থাকার কথা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লাউয়াছড়ায় ছিন্নমূল মানুষদের জ্বালানিকাঠ সংগ্রহ বেশ কিছুদিন ধরে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। নির্ভরযোগ্য সূত্রটি জানায়, এক অসাধু কর্মকর্তাকে কাঠসংগ্রহের নামে এলাকার গরীব কিছু নারী ‘বিশ’ টাকা করে দিয়ে বনে প্রবেশ করতেন এবং ছোট ছোট গাছ কেটে-কুটে সাফ করে দিতেন।
কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টির প্রমাণ পেয়ে ওই বন কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করে দেয় এবং জ্বালানিকাঠ সংগ্রহের উপর কড়াকড়ি আরোপ করে। প্রায় পাঁচ-ছয় মাসে ধরে এই কড়াকড়ির ফলে ফিরে এসেছে লাউয়াছড়া বনের স্বাভাবিক চিত্র। আপনা থেকেই বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে নানা প্রজাতির ছোট-মাঝারি লতাগুল্ম।
রোদ-বৃষ্টির পর কয়েক মাস ধরে লাউয়াছড়াতে ছোট ছোট লতাগুল্ম কাটা বন্ধ করার ফলেই বেড়েছে সবুজের মেলা। দুর্লভ জীববৈচিত্র্য ফিরে পেয়েছে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৭
বিবিবি/জেডএম