ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লাউয়াছড়ার দুষ্প্রাপ্য পতঙ্গটির আয়ু দুই সপ্তাহ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
লাউয়াছড়ার দুষ্প্রাপ্য পতঙ্গটির আয়ু দুই সপ্তাহ শুকনো ডালে বসে আছে লেসার এটলাস মথ, ছবি: শামীম আহমেদ

মৌলভীবাজার: জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। তিন ঘণ্টার পায়ে চলার পথে অগ্রসর হলেই নানান কীট-পতঙ্গের দেখা মেলে। কোনোটা উড়ন্ত, কোনোটা আবার স্থির হয়ে বসে আছে গাছের পাতায়-ডালে অথবা ঘাসে। যেন তারা আপন মনে ধ্যানমগ্ন।

কিছু পতঙ্গ আবার ভয়ার্ত স্বভাবের! চোখে কোনো বস্তুর উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে চলে যাবেই। আবার কিছু পতঙ্গের আছে তার কাছে গিয়ে ঘেঁষলেও উড়ে যাবার কোনো তাগাদা থাকে না।

জীববৈচিত্র্যের আধার লাউয়াছড়ায় এবারের বর্ষা মৌসুমে প্রথম দেখা মিলেছে অনিন্দ্যসুন্দর একটি মথের। দুষ্প্রাপ্য এই মথটি প্রসঙ্গে প্রখ্যাত প্রজাপতি গবেষক অমিত কুমার নিয়োগী বাংলানিউজকে বলেন, এর ইংরেজি নাম লেসার এটলাস মথ। বৈজ্ঞানিক নাম Samia canningi। এই মথটি Saturniidae গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এটি এটলাস মথ অপেক্ষা তুলনামূলক ছোট। এটলাস মথ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকারের কীটপতঙ্গের মধ্যে অন্যতম। লেসার এটলাস মথের পাখার প্রসারতার দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০-১৫০ মিলিমিটার বা এর ঊর্ধ্বে পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে থাকে।  

পুরুষ এবং মহিলা মথের রঙ ও পার্থক্য তুলে ধরে তিনি বলেন, মহিলা লেসার এটলাস মথ পুরুষদের তুলনায় আকারে বড় এবং ভারী। এই মথের ডানার রঙ লালচে বাদামি। সম্মুখ ও পশ্চাৎ উভয় ডানার ভিতরে সেল অংশে অর্ধচন্দ্রাকৃতি বা মাকু আকৃতির হলদে দাগ রয়েছে। যা ডিসকাল অংশে সাদা সীমারেখা মাঝামাঝি অংশে মিলিত হয়েছে। এই মথের সম্মুখ ডানার এপিকাল এক্সটেনশনের কিনারা কিছুটা ঈষৎ হলুদ বর্ণের, যা অনেকটা দেখতে সাপের মাথার মতো। তাই গ্রিকমিথে এই মথকে ‘স্নেকস হেডেড মথ’ বলা হতো। উজ্জ্বল রং সত্ত্বেও লেসার এটলাস মথ বন্য অবস্থায় খুঁজে পাওয়া অসম্ভব কঠিন। বিভ্রান্তিকর রঙের প্যাটার্ন ও ডিসকাল অংশের সাদা সীমারেখা অনিয়মিত আকারে ভেঙে যাওয়া শিকারির চোখে বিভ্রান্তি সৃষ্ট করে।

মথটির উৎপত্তি প্রসঙ্গে অমিত কুমার নিয়োগী বলেন, এই মথের শুঁয়াপোকা ৩৩ মিলিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে এবং প্রত্যেকটি মুহূর্ত খাদ্যগ্রহণে ব্যস্ত থাকে। কোকুন এর আকার ৪৭ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক মথ বড় হতে পারে, তবে তারা কোকুন থেকে বেরিয়ে আসার পরে আর খাদ্য গ্রহণ করতে পারে না কারণ তাদের শূর আকারে অনেক ছোট হয়। ভোজন করার ক্ষমতা ছাড়াই, এটলাস মথ কেবল এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে জীবনচক্র করে। এই মথেরা দিনে বেশিরভাগ সময় নড়াচড়া করে না, মিলনের জন্য তাদের শক্তি সঞ্চয় করে। তবে এরা অন্য মথের ন্যায় রাতে সক্রিয় থাকে।

প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরসবুজ ও মিশ্র চিরসবুজ বনে এদের দেখা মেলে। তবে খুবই বিরল। সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে এরা ‘সিল্ক কীট’ নামে পরিচিত। অনেক দেশে বাণিজ্যিকভাবে এই মথের চাষ করে এদের কোকুন বা গুটি হতে সুতা তৈরি করা হয়। সাধারণত এরা Euphorbiaceae ও Rutaceae গোত্রের উদ্ভিদে ডিম পারে।

প্রজাপতি ও মথের পার্থক্য তুলে ধরে গবেষক আমিত কুমার বলেন, লেপিডোপটেরা বর্গের অন্তর্ভুক্ত প্রজাপতি ও মথ দুইটি দুই ধরনের পতঙ্গগোষ্ঠী। প্রজাপতি সাধারণত দিনের বেলাতে সক্রিয় থাকে, এদের লম্বা চোষণাঙ্গ থাকে। স্ত্রী প্রজাপতিকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে তারা সঙ্গমে মিলিত হয়। এদের দৈহিক গঠন, ডানার রঙ ও ওড়ার ক্ষমতা মথের থেকে ভিন্ন হয়। প্রজাপতি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। অন্যদিকে, মথেরা সাধারণত রাতের বেলাতে সক্রিয় হয়। সেক্স ফেরোমনের মাধ্যমে স্ত্রী মথকে আকৃষ্ট করে। এরা সাধারণত পাতার নিচের পৃষ্ঠে বিশ্রাম নিতে বেশি পছন্দ করে। এদের চোষণাঙ্গ থাকে, তবে অনেক ক্ষেত্রেই তা মধু সংগ্রহের উপযোগী হয় না।

প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী শামীম আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি লাউয়াছড়া গবেষণার কাজে বন পরিভ্রমণের সময় এই বিশালাকৃতির লেসার এটলাস মথটি দেখতে পাই। তখন তার ছবি ধারণ করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৭
বিবিবি/এমজেএফ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।