ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

অতিবর্ষণে ক্ষতির মুখে লাউয়াছড়ার পর্যটকপথ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
অতিবর্ষণে ক্ষতির মুখে লাউয়াছড়ার পর্যটকপথ লাউয়াছড়ার পর্যটকের ভ্রমণের বিড়ম্বনা; ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: টানা ভারী বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পর্যটক চলাচলের পথগুলো। এছাড়াও কয়েক মাস আগে লাউয়াছড়ার মাটি-ধসে-যাওয়া প্রবেশমুখের কালভার্টটিও এখন ঝুঁকির মুখে। অতিবর্ষণের ফলে মাটি সরে গিয়ে বর্তমানে এর নিচে বিপদজ্জনকভাবে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যা পর্যটকদের চলাচলে জন্য হয়ে পড়েছে অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে, লাউয়াছড়ার মাটি-ধসে যাওয়া পর্যটকপথগুলোর দ্রুত মেরামত করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেয়া গেছে, গত কয়েক মাসের টানা ভারী বৃষ্টিতে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরের পর্যটক চলাচলের সবগুলো ট্রেইল(পর্যটক চলাচলের সরু পাহাড়ি পথ) ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে।

পাহাড়ি সরু পথগুলোর (পর্যটক চলাচলের সরু পাহাড়ি পথ) মাটি সরে সে পথের অনেক স্থানে জমে আছে কাদা ও নানান আবর্জনা। অনেক স্থানে আবার ছোট বড় অনেক খানাখন্দেরও সৃষ্টি হয়েছে। পর্যটকরা এখন পাহাড়ি ঝোঁপের মধ্য দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রবেশপথের একটি কালভার্ট এলাকার মাটি সরে একাংশ ভেঙ্গে গেছে। কালভার্টটি পুরো ভেঙ্গে গেলে জাতীয় উদ্যানের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে—এমন আশঙ্কা প্রবল। গত এপ্রিল মাস থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাত এখনও অব্যাহত রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। দিন রৌদ্রোজ্জ্বল হলেও রাতে নামছে মুষলধারায় প্রবল বৃষ্টি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইকো-ট্যুর গাইড বাংলানিউজকে বলেন, লাউয়াছড়ার ভেতর একটি আধা ঘণ্টার ফুট-ট্রেইল(পাহাড়ি পায়ে চলাপথ), একটি এক ঘণ্টার ফুট-ট্রেইল ও একটি তিন ঘণ্টার ফুট-ট্রেইল রয়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটকরা ইকো ট্যুর গাইড নিয়োগ করে তাদের সহায়তায় সহজে গভীর অরণ্যে প্রবেশ করে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য উপভোগ করে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রতিদিন সামান্য সংখ্যক পর্যটক এলেও সরকারী ছুটি ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার গড়ে এক হাজার থেকে দেড় হাজার পর্যটক আসেন লাউযাছড়ায়। স্বাভাবিক বা মাঝারি বৃষ্টির কারণে মাটি ক্ষয় হওয়ার  আশঙ্কা মাথায় রেখে উদ্যানের ট্রেইলের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ও ছড়ার পাশে বালুর বস্তা স্থাপন করা ছিল। টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সেসব বালুর বস্তা ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পাকা আরসিসি ঢালাই দিয়ে ছড়ার পর্যটক চলাচল এলাকায় গাইড ওয়াল দেওয়াই হবে টেকসই ও উত্তম ব্যবস্থা।

লাউয়াছড়ার প্রবেশপথের ক্ষতিগ্রস্ত কালভার্ট; ছবি: বাংলানিউজপর্যটকরা টাকা দিয়ে এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পর্যটকদের যাতাযাতের পথগুলোর ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন একাধিক ইকো ট্যুর গাইড।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক(এসিএফ)তবিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কালভার্টটি আমরা মেরামত করেছিলাম। কিন্তু প্রবল বৃষ্টির কারণে এটি পুনরায় ক্ষতির মুখে পড়ে। কালভার্টটি পুনর্নির্মাণের জন্য আমাদের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টিতে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়। জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব ট্রেইল ও ছড়ার পর্যটক চলাচলপথের উন্নয়নের বিষয় নিয়ে কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। বৃষ্টি থামলে সংস্কারকাজে হাত দেয়া হবে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান একটি সংরক্ষিত বন। এখানে নানা ধরণের জীববৈচিত্র্যের বসবাস। অধিক সংখ্যক সাধারণ পর্যটক এখানে প্রবেশ করানোর অর্থ এর প্রাকৃতিক পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া। এই বিষয়টি সবার আগে আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এমনই অভিমত  এসিএফ তবিবুর রহমানের।

বাংলাদেশ সময়:১২০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৭
বিবিবি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।