প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম শনিবারকে আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশ এ দিনটি এবার ঈদের দিন (২ সেপ্টেম্বর) থাকায় বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর অবধি পালন করা হয়।
প্রতি বছরের মতো এবারও আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ, বাংলাদেশ (আইইউসিএন) ও বন বিভাগের উদ্যোগে পালিত হলো ‘আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস’। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এমরান হোসেন।
জেনিফার আজমিরীর প্রাঞ্জল উপস্থাপনায় শকুন গবেষণার উপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইউসিএন বাংলাদেশের শকুন গবেষণা প্রকল্পের মুখ্য গবেষক এবিএম শারোয়ার আলম।
বিলুপ্তপ্রায় শকুনের উপর গবেষণামূলক মূল্যবান বক্তব্য দেন প্রখ্যাত পাখি গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক। শকুনের বিলুপ্তির কারণ ও প্রতিবন্ধকতাগুলো প্রতিকার তুলে ধরে বক্তব্য দেন আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মিহির কুমার দো, হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার মো. নাজিম উদ্দিন।
আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবসের সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আরএসএম মুনিরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে পশু চিকিৎসকদের মধ্যে মেলোক্সিক্যাম ভ্যাকসিন ফ্রি বিতরণের পর শকুন বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানের পর একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহরের সড়ক প্রদক্ষিণ কর।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য বাংলাদেশের প্রধানতম শকুনের নিরাপদ এলাকা। এটি তাদের প্রজনন ও বিশ্রামস্থল। একশো শকুনের বসবাস রয়েছে এখানে। চলতি বছর প্রায় একজন ডজন শকুনছানা দলটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
আরও জানানো হয়, ‘ডাইক্লোফেনাক’ ও ‘কিটোপ্রোফেন’ নামক গবাদিপশুর ভ্যাকসিন দুটোই ছিল শকুন প্রজাতির জন্য অত্যন্ত মরণঘাতী। সরকার ২০১০ সাল ‘ডাইক্লোফেনাক’ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ‘কিটোপ্রোফেন’ নিষিদ্ধ করেছে। শকুনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এই ড্রাগ দুটোর ফলেই বর্তমানে শকুন আমাদের চারপাশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন প্রজাতির শকুনগুলো। তবে গরুর চিকিৎসায় ব্যবহৃত ‘মেলোক্সিক্যাম’ ভেকসিনটি শকুনের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ।
‘ডাইক্লোফেনাক’ ও ‘কিটোপ্রোফেন’ দুটি ওষুধই ব্যথানাশক। ১০ বছর আগে ভারত এটি নিষিদ্ধ করে। গরুর শরীরে এ ওষুধের প্রয়োগের পর সেই গরু মারা গেলে এবং সেই মাংস শকুন খেলে তা মারাক্তক প্রভাব ফেলে। এই ওষুধ নিয়ন্ত্রণ করে ভারতে ব্যাপক হারে বেড়েছে শকুন। বাংলাদেশও নিষিদ্ধ করে এর ফল পেতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ালে আরও বাড়বে। উঁচু বড় গাছ নিধনও শকুন বিলুপ্ত হওয়ার বড় একটি কারণ। এটিও রোধ করা দরকার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
বিবিবি/এএ