আমাদের প্রকৃতি থেকে তো পরম উপকারী বৃক্ষবন্ধুদের একে একে কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। কোথায় পাওয়া যাবে তবে ছায়াদানকারী গাছেদের? রাস্তার দু’পাশকে বৃক্ষশূন্য, ছায়াশূন্য করা হচ্ছে।
তবে, পরম শান্তির ছায়া সুনিবিড় এক স্থান লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান! এখানে প্রবেশ করামাত্র খর রৌদ্রের তীব্রতা ও জ্বালা মুছে যায় নিমেষে। রৌদ্রতপ্ত গায়ে এসে লাগে প্রাণজুড়ানো শীতলতা আর সতেজতার স্নিগ্ধ পরশ। অরণ্যের সার্থকতা এখানেই। লক্ষকোটি গাছগাছালি আর শতসহস্র প্রজাতির লতাগুল্ম সেই শীতলতারই প্রাকৃতিক রচয়িতা।
লাউয়াছড়ায় বুধবারের (৪ অক্টোবর) দুপুরবেলাটা অরণ্যের শান্ত-শীতলতা আর মৌনতায় নিবিড় হয়ে ধরা দিয়েছিল।
রোদের তীব্রতা থেকে একটুখানি আড়াল কে না চায়! সবাই চায় অরণ্যছায়ায় কিছুটা শান্ত, শীতল হতে। ছায়া-সুনিবিড় শীতলতার অনন্য এক স্থান এই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এখানে প্রবেশমাত্র শরীরজুড়ে নেমে আসে স্নিগ্ধতা। সমস্ত অনুভূতি ঘিরে নেমে আসে শীতলতা আর সতেজতার পরশ।
যারা নির্জনতাকে খুব ভালোবাসেন, যারা প্রকৃতির স্নিগ্ধতার সাথে নিজেদের পূর্বপূরুষের গুহাময় জীবনের কল্পনায় ক্ষণিকের জন্য হলেও বুঁদ হতে চান, তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ গন্তব্য এই লাউয়াছড়া।
পাকা সড়ক থেকে ডানে বা বাঁয়ে তাকালে চোখে ভেসে উঠবে ঘন সবুজের এক অফুরন্ত মিলনসম্ভার। অজানা-অচেনা হাজারো গাছের অগণিত পত্রপল্লব একে অপরের সাথে যেনবা জন্মজন্মান্তরের বন্ধনে জড়াজড়ি করে আছে। পাতায় পাতায়, ডালে ডালে এক অনাবিল প্রেমময় সবুজ পরশ ছড়ানো।
আর বাতাস! সে তো মাঝেমাঝে যেন কোথা থেকে এসে সেই গাছেদের মৃদু-আলতো দোলা দিয়ে যায়। যেনবা, 'বাতাস আমারে ঘিরে খেলা করে/ মোর চারিপাশ'! এ প্রাকৃতিক দৃশ্য পৃথিবীর অন্যসব অপরূপ দৃশ্যের মতোই অতুলনীয়!
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আরণ্যক’-কে বড় আশ্চর্য রকমভাবে খুঁজে পাওয়া যাবে এখানে। একবার নয়; বহুবারের জন্যে। যতবার এই পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া যায়, শীতলতার শান্ত পরশ ততবারই। ততবারই মৌনমুখর আত্ম-অনুভূতির চির স্বস্তি।
লাউয়াছড়া আজ বুঝি এভাবেই সবাইকে নিমেষে আপন করে ফেলে!
বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৭
বিবিবি/জেএম