ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

অতিবৃষ্টিতে হুমকিতে চা উৎপাদনও

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
অতিবৃষ্টিতে হুমকিতে চা উৎপাদনও বৃষ্টিসিক্ত চা বাগানের ভেজা মাটি, ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: অতিবৃষ্টির দাপট থেকে নিস্তার পাচ্ছে না দুই মিটার উচ্চতার চা গাছগুলোও। বিস্তৃত সবুজ পাতাদের নরম শরীরজুড়ে বিরামহীন বৃষ্টির প্রকোপ ক্রমশই নষ্ট করছে চায়ের প্রক্রিয়াজাত সম্ভাবনা। বার্ষিক গড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

‘ক্যামেলিয়া’ প্রজাতির চা গাছগুলোতে এখন বৃষ্টিমুখর শীতের আমেজ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পত্রপল্লবের সবুজ শরীরজুড়ে জলজ স্পর্শের খেলা।

চা বাগান ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলোর পরিবেশেও এখন হিমেল তাপমাত্রা।  

চা বাগানের টিলা বা সমতল ভূমিজুড়ে বিস্তৃত এ বিরতিহীন বর্ষণ চা গাছের খাদ্যগ্রহণ ও শারীরিক বৃদ্ধিতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। উজ্জ্বল সবুজের সমারোহে হানা দিচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অতিবৃষ্টি অব্যাহত থাকায় চায়ের উৎপাদনও তুলনামূলকভাবে কমে গেছে।

বৃষ্টিসিক্ত চা বাগানের ভেজা মাটি, ছবি: বাংলানিউজদৈনিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ডের তথ্য এবং চা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে চলতি বছর চা শিল্পে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। এর সার্বিক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাজারেও।

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশে সর্বোচ্চ ৮৫.০৫ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে, যা চা শিল্পের ১৬২ বছরের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছিল।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আবহাওয়া সহকারী আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিরতিহীন এ বৃষ্টিপাত গত বুধবার (১৮ অক্টোবর) শুরু হয়ে শনিবার  (২১ অক্টোবর) পর্যন্ত চলছে। চলতি বছরের ০১ জানুয়ারি থেকে ২১ অক্টোবর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫২৩ দশমিক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা বিগত বছরগুলোর মধ্যে রেকর্ড।

সিলেট বিভাগের প্রবীণ ‘টি-প্লান্টার’ চা বিশেষজ্ঞ শাহজাহান আখন্দ বাংলানিউজকে বলেন, ‘অতিবৃষ্টি ও অতিখরা- দু’টিই চায়ের জন্য মারাত্মক হুমকি। একে টি-ল্যাঙ্গুয়েজে ‘ওয়াটার ট্রেস’ বলে। অতিবৃষ্টিতে মাটি অতিরিক্ত ভিজে গিয়ে পানিশোষণ ক্ষমতা হারিয়েছে। ফলে গাছের শেকড় প্রয়োজনমতো খাদ্যগ্রহণ করতে পারছে না। চায়ের স্বাভাবিক গ্রোথও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে’।  

‘চা গাছের টেম্পারেচার ফল করেছে, এখানে ভেন্টিলেশন নেই। চা গাছে যেসব সার দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও সব ধুয়ে গেছে। চায়ে মশার উপদ্রব বৃদ্ধিসহ অনেকগুলো বিষয়ও এ আবহাওয়া ও অতিবৃষ্টির সঙ্গে জড়িত’।  

চা বাগানের বিস্তৃত সৌন্দর্য, ছবি: বাংলানিউজতিনি আরো বলেন, ‘এখন যে বৃষ্টি, তা সারা বাংলাদেশ জুড়ে হচ্ছে। এটি ডিপ্রেশন রেইন, সিজনাল রেইন নয়। এখন থেকে সিজনাল রেইন খুব একটা আর পাওয়া যাবে না। এ বৃষ্টিপাতের পর থেকে প্রাকৃতিক তাপমাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করবে এবং মাটিও ১৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে নেমে যাবে।   পুরনো ও প্রাপ্তবয়স্ক চা গাছগুলো আর পাতাও ছাড়বে না। ফলে সার্বিক ফলন এখন থেকে কমবেই। তা বাড়ার আর কোনো সম্ভাবনাই নেই’।

‘আমাদের চা বাগানের রেকর্ড অনুসারে এ বছর প্রায় ১৫০ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত বছরের চায়ের গড় উৎপাদনের ধারে-কাছেও যেতে পারবে না এ বছর’।

গত সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৯ দশমিক ৩ মিলিয়ন কেজি কম চা উৎপাদিত হয়েছে বলেও জানান শাহজাহান আখন্দ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
বিবিবি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।