এক কথায় বলতে গেলে, যুবরাজ সিংহের মতোই ধুঁকছে কুমিল্লা চিড়িয়াখানা।
অব্যবস্থাপনা, নোংরা পরিবেশ, পশু-পাখির শূণ্যতা— সব মিলিয়ে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে কুমিল্লা চিড়িয়াখানায়।
সরেজমিনে চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, দুর্দশার বিভিন্ন চিত্র। গাছপালা দেখে মনে হতে পারে ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে, ময়ুরের খাঁচাটি দুমড়ে-মুচড়ে একাকার, ভাল্লুকের খাঁচা খালি, এর পাশেই ময়লা-আর্বজনার স্তূপ। অন্যদিকে দুটি খাচাঁয় ছয়টি বানর, একটিতে টার্কি মোরগ, হরিণের বিশাল খাচাঁর শোভাবর্ধন করছে দুটি হরিণ। আর সিংহের খবর? নির্মম সত্য হলো, যুবরাজ সিংহ মৃত্যুর প্রহর গুণছে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত চিড়িয়াখানার একমাত্র আকর্ষণ ছিলো যুবরাজ নামের সিংহটি। অনেকদিন ধরেই সে শয্যাশায়ী। মৃত্যু যেন দরজায় কড়া নাড়ছে। খাবারও তেমন মুখে তুলছে না। যুবরাজকে দেখতে গিয়ে দর্শনার্থীদেরই উল্টো মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে তার মুমূর্ষু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। এরপর থেকেই চিড়িয়াখানার ঠিকাদার ও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের সমালোচনায় মুখর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষেরা। দর্শনার্থী সুমী বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ চিড়িয়াখানায় কিছুই নেই। নোংরা পরিবেশ। ২০ টাকার টিকিট কিনে ভিতরে এসে হতাশ হলাম। কুমিল্লায় কি জনপ্রতিনিধি নেই? চিড়িয়াখানার করুণ অবস্থা তাদের নজরে আসে না?’
স্থানীয় সূত্র জানায়, যুবরাজকে অনেক আগে থেকেই পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয় না। খাবারের অভাবে ৫/৬ বছর ভুগে আজকের অবস্থা দাঁড়িয়েছে সিংহটির। অনেকের মতে, ঠিকাদারদের অবহেলায় যুবরাজের এ হাল।
জানা যায়, ১৯৮৬ সালে কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরি মৌজায় জেলা প্রশাসকের বাংলোর পাশে ১০.১৫ একর ভূমিতে গড়ে ওঠে কুমিল্লা চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। এ ভূমির মালিক জেলা প্রশাসন, ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জেলা পরিষদ। এ দুই প্রতিষ্ঠানের দোটানায় চিড়িয়াখানার কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না।
লিজ নেওয়া অংশীদারদের একজন মামুনুর রহমান পাটোয়ারী। তিনি বাংলানিউজকে, ‘লিজ ও পশু-পাখির খাবার মিলিয়ে বছরে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়। কিন্তু পশু-পাখি না থাকায় দর্শনার্থী তেমন আসছে না। এতে আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। ’মানবাধিকার কর্মী ইয়াসমিন রীমা বলেন, ‘আমাদের জন্য এ বিষয়টি খুবই হতাশার। উপমহাদেশের প্রাচীন শহর কুমিল্লার চিড়িয়াখানার এ নাজুক অবস্থা আমাদের ব্যথিত করেছে। অচিরেই চিড়িয়াখানাটি সংস্কার করে পশু-পাখি এনে নতুন রূপ দান করা উচিত। ’
কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, যুবরাজ সিংহটির চিকিৎসা করিয়েছি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, একটি সিংহ সাধারণত ১৪ বছর বাঁচে। যুবরাজের বয়স ১৮ বছর। সিংহটি বাড়তি জীবনকাল অতিবাহিত করছে। চিড়িয়াখানার মাটি ভরাট করেছি। দেওয়াল নির্মাণকাজ চলছে। কিছুদিনের মধ্যে পশু-পাখি আনা হবে। আশা করছি চিড়িয়াখানার উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০১৭
এসও/আরআইএস/