দুপুরে গড়াতেই থলি ভরে উঠে নানান প্রজাতির দেশি মাছে। থলি ভরে যাওয়া মাছের ‘ঝলৎ’ শব্দে বারবার নেচে ওঠে তার হৃদয়।
তবে এখন তিনি হতাশ। তার সেই ব্যক্তিগত হতাশা আজ রূপ নিয়েছে ক্ষোভে। কারণ, এখন আর তিনি থলি ভরে মাছ ধরতে পারেন না। প্রিয় মাছের পরশে চমকে উঠে না মন। সারাটি দিন গড়িয়ে গেলেও একটি মাছও ওঠে না বরশিতে।
সৌখিন মাছ শিকারীর নাম শেখ মোহাম্মদ সালিক। বরশি দিয়ে মাছ ধরা যার অদম্য নেশা। প্রতিদিন এভাবে মাছ ধরার টানেই প্রায় দুই কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে হাইল হাওরে ছুটে যান আধা ডজন বরশি কাঁধে করে।
তিনি যে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তা আসলে নয়। তার প্রচণ্ড ভালো লাগে মাছ ধরতে। বরশিতে বিঁধে যাওয়া মাছ পানি থেকে ডাঙায় তুলে আনার নেশাটি তার বহু পুরোনো।
প্রতিদিন তার মৎস্য প্রাপ্তির পরিমাণ পাঁচ থেকে আট কেজি পর্যন্ত। আর সময়সীমা চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। রুই, কাতল, কালিয়ারাসহ নানা প্রজাতির মাছ তার বরশিতে বিঁধতো। কিন্তু আজ তিনি শূন্য। ওই চার-পাঁচ ঘণ্টা বসে থেকে একটি মাছও তিনি তার বরশিতে বেঁধাতে পারেননি।
বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে হাইল হাওরের শ্রীমঙ্গল উপজেলার লামুয়া নামক এলাকায় গেলে দেখা হয় শেখ মোহাম্মদ সালিকের সাথে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ মানুষ। শখের বসে মাছ মেরে খাই। গত ১৫ দিন ধরে আমি এখানে নিয়মিত বরশি দিয়ে মাছ মারি। প্রতিদিন ৫/৭ কেজি মাছ পাই। কিন্তু আজ একটি মাছও পাইনি। গতরাতে (মঙ্গলবার) আশিক মিয়ার পাট্টার জায়গায় অবস্থিত মাছের খামারে কে বা কারা বিষ দিয়ে সব মাছ মেরে ফেলেছে। আজ একটি মাছও নাই। একটি ছোট্ট দাড়কিনা মাছও নাই। এটা কি ঠিক হলো? আমরা এই এলাকাতেই মাছ ধরি। এইভাবে হলে গরিব মানুষ বাঁচবে কি করে?’
তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, ‘এখন আমার অনুরোধ হলো এই হাওরে যত অবৈধ নেটের বেড়া আছে সব তুলে ফেলতে হবে। আটকে রাখা মাছগুলো উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যাতে করে মাছের উপর নির্ভরশীল সাধারণ মৎস্যজীবীরা বেঁচে থাকতে পারেন। ’যারা জলমহালের লিজ এনেছেন তারা সরকারি নীতিমালা মেনে মাছ ধরছে না। কারেন্ট জাল, প্লাস্টিক নেটের জাল বা মেশিন দিয়ে পানি সেচে মাছ ধরা হচ্ছে। যাদের এগুলো দেখার কথা তারা এগুলো দেখছে না। প্রশাসন কিংবা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে এ বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে বলে জানান এই হাওর পাড়ের বাসিন্দা।
হঠাৎ ক্ষোভের সাথে বলে উঠেন, “হাওর খাইছে জালে, আর পাহাড় খাইছে করাতে” -এই দুইটা জিনিস বন্ধ করতে পারলেই প্রাকৃতিক হাওর-বিল এবং প্রাকৃতিক বন-পাহাড় ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
হাওরকে রক্ষা করতে হলে কী করতে হবে? এ প্রশ্নের উত্তরে শেখ মোহাম্মদ সালিক বলেন, ‘দেখেন, সারা হাওরজুড়ে নেটের জাল! হাওরে যত অবৈধ নেটের জাল আছে সব তুলে ফেলতে হবে। বাঁধ দিয়ে মেশিনের সাহায্যে মাছ শিকার বন্ধ করতে হবে। তবেই বাঁচবে হাওর। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, ২০ নভেম্বর, ২০১৭
বিবিবি/আরআই