ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

শীত আসছে আপন খেয়ালে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
শীত আসছে আপন খেয়ালে শীত আসছে।

প্রতিদিনই হিমেল বাতাসের ঝাপ্টায় নামছে তাপমাত্রার পারদ। টান পড়ছে সোয়েটার-চাদরে। তবে মনমতো ঠাণ্ডা এখনও গায়ে লাগেনি। সকলেই শীতের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। বাংলাদেশে শীত এখন পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারের পাতায় ভর করে আসে না। আসে আপন খেয়ালে।

শীত বাংলাদেশে আসে শিশিরের শব্দের মতো। পৃথিবীর পূর্ব-গোলার্ধে বাংলাদেশের অবস্থান।

এর উপর দিয়ে চলে গেছে কর্কটক্রান্তি রেখা। ফলে পুরোপুরি শীতের দেখা পাওয়া যায় না এখানে,  যেমনটি পেয়ে থাকে উত্তর প্রান্তের তুষার ও বরফাবৃত মানুষ।

তারপরেও টের পাওয়া যাচ্ছে বাতাসে হিমেল টান, রোদের মিষ্টি পরশ। অনুভব করা যাচ্ছে, আমাদের আশেপাশে উত্তুরে হাওয়া ঢুকতে শুরু করেছে। বাতাসে জলীয় বাষ্প নেই। নতুন করে জলীয় বাষ্প তৈরি না হলে তাপমাত্রা নামবে অতি দ্রুত। তবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রকৃত শীত পড়বে বলে আবহাওয়ার নানা সূত্র জানিয়েছে।

শীতের স্বর্গীয় সৌন্দর্য্য ফুটে উঠছে সরিষা ক্ষেতে। মাঠের পর মাঠ জুড়ে ফুটে থাকা হলুদ সরিষার ফুল যেন বিছিয়ে রাখে হলুদ ফুলেল চাদর। আর সেই ফুলকলিদের উপর উড়ে চলা রঙ্গিন প্রজাপতি আর মৌমাছিদের মেলা মন হরণ করে।

শীত আসছে।  চোখ মেললেই দেখা যাচ্ছে,  মটরশুঁটি আর সবুজ ঘাসের ডগায় টলমল করছে শিশির বিন্দু। সকালের রোদের আলোকচ্ছটার নানা রঙ ছড়াচ্ছে হীরক দ্যুতির মতো।

নস্টালজিয়ার কুয়াশা মাখিয়ে ফিরে আসছে শৈশবের শীতের এক আলাদা অনুভূতি। মনে পড়ছে, কুয়াশায় আচ্ছন্ন শীতের সকাল! মুখ খুললেই ধোঁয়া বের হওয়া দেখে অবাক হয়ে যাওয়া। ভাপা, চিতুই, পাটিসাপটা, পুলি, কুলি নানা ধরনের পিঠা। ঘুম ভাঙ্গলেও বিছানা ছেড়ে উঠতে মন না চাওয়া। তুলে রাখা তোরঙ্গের লেপ কাঁথা কম্বলের সে এক দারুণ মজা। রোদে দেওয়া ওম। তুলোর ফাঁকে ঢুকে থাকা রোদের গন্ধ। সন্ধ্যাকাশে দিগন্ত জুড়ে সারি বেঁধে উড়ে চলা অতিথি পাখির দল। কিচির-মিচির শব্দ। শীতের অনন্য প্রকৃতি।

নগর জীবনে শীতের আবেদন আলাদা, তবে গ্রামে যেন প্রতি পদক্ষেপে অনুভব করা যায় শীত ঋতুর তাৎপর্য্য। বাংলার পথে-প্রান্তরে, মাঠেঘাটে তাকালেই চোখে পড়ে খেজুরগাছের আগায় ঝুলছে ছোট্ট রসের হাঁড়ি। কোথাও গাছ থেকে রস নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন গাছিরা। আর ফসলের মাঠজুড়ে সোনালি আভায় সকাল-সন্ধ্যা জমে হিম হিম কুয়াশা। শীতে জ্বাল দেওয়া গরম রস বা কাঁচা রস দুই এর স্বাদই অতুলনীয়! আর রসে ভেজানো রসের পিঠার তো জুড়িই নেই কোনো।

শুষ্ক এ ঋতুতে  শুকিয়ে আসে খাল বিলের পানি। কোথাও হাঁটুজল, কোথাওবা খটখটে চর জাগে। আর তাই গ্রামের দূরন্ত কিশোর-কিশোরীরা মেতে ওঠে অল্প পানিতে মাছ ধরার উৎসবে। সেইসঙ্গে খাবারের খোঁজে খাল-বিল আর মাঠে-ঘাটে ঝাঁকে ঝাঁকে নামে সাদা বকের ঝাঁক। ঝাঁকে ঝাঁকে সাদাফুলের মত বসে থাকা বকের শুভ্রতা সেও এক অপরূপা দৃশ্য।

শীত আসছে।  গ্রামও শহরের হাট-বাজারগুলোতে সব্জীপসারীর ডালায় ডালায় থরে থরে সাজানো শীতের সব্জী ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, শালগম, ওলকপি, গাজর, টমেটো চোখ জুড়ায়, মন ভরায়।

আহা! ছবির মতো এতো সুন্দর ঋতুগুলো বাস্তবে পাওয়া বড় কঠিন। গ্রীষ্মে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়। বর্ষায় জল ও জঞ্জালে দুর্বিসহ জীবন কাটায় মানুষ। শীতে খানিক ওম ও উষ্ণতায় জীবনকে রাঙানোও আর হয় না। দ্রুতই হারিয়ে যায় স্বল্পস্থায়ী শীত। রেখে যায় নগরের ছিন্নমূল মানুষ ও গ্রামের দরিদ্র জনতার জীবনে কষ্টের কম্পন।

শীত আসছে। ধীর পায়ে। তবু টের পাওয়া যাচ্ছে। আমরাও তৈরি হচ্ছি রঙিন পোশাক ও আনন্দে।

কিন্তু আমরা কি টের পাচ্ছি ছিন্নমূল-হতদরিদ্র মানুষের শীতের কষ্ট?

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১৭
এমপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।