ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

দোয়েলের ‘নিকটাত্মীয়’ গায়ক পাখি শ্যামা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৮
দোয়েলের ‘নিকটাত্মীয়’ গায়ক পাখি শ্যামা ডালে বসে ডাকছে ধলাকোমর-শ্যামা। ছবি : সাঈদ বিন জামাল

মৌলভীবাজার: আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েলের কাজিন বলা হয় সুকণ্ঠী পাখি শ্যামাকে। দু’জনেই একই ‘গণ’ (পরিবার) এর পাখি। বৈশিষ্ট্যেও আছে অনেক মিল। দু’জনের বৈজ্ঞানিক নামের সঙ্গেই যুক্ত ‘Copsychus’  শব্দটি।

বন্য পথে হাঁটতে গিয়ে বহুবার শ্যামার ‘ওই-অ-লী-নাউ... ওই-অ-লী-নাউ...’ ডাকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠার সুযোগ হয়েছে। এ ডাক এতোটা তীব্র নয়; তবে মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করলে কান এড়িয়ে যেতে পারে না এ সুমিষ্ট ডাক।


 
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, দোয়েল ও শ্যামার এক ‘গণ’। দোয়েলের বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus saularis এবং শ্যামার বৈজ্ঞানিক নাম Copsychus malabaricus। নামের প্রথম অংশটা এক। বৈজ্ঞানিক নামটা কিন্তু হয় ‘ল্যাটিন’ শব্দ। এই ল্যাটিন শব্দ দিয়ে পাখিদের বৈজ্ঞানিক নামটি দেওয়া হয়েছে এবং সারা পৃথিবী এটি অনুসরণ করে।
 
ডালে বসে ডাকছে ধলাকোমর-শ্যামা।  ছবি : সাঈদ বিন জামালআরেকটি বিষয় হলো, পাখিদের বৈজ্ঞানিক নামের দু’টি অংশ দু’টি বিষয় তুলে ধরে। যেমন, শ্যামা বৈজ্ঞানিক নামটি হলো Copsychus malabaricus। এখানে প্রথম অংশটি ‘কপসাইকাস’ হলো পাখির ‘গণ’ অর্থাৎ পরিবারের নাম এবং দ্বিতীয় অংশটি ‘মালাবারিকাস’ হলো পাখিটির প্রজাতির নাম। এভাবেই ল্যাটিন শব্দের এ বৈজ্ঞানিক নাম দিয়ে পরিবার ও প্রজাতিকে খুব সহজে চেনা যায়।
 
দু’টি পাখির বিস্তৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রজাতির দোয়েল ও শ্যামা পাওয়া গেলেও আমাদের দেশে মাত্র একটি প্রজাতির দোয়েল এবং একটি প্রজাতির শ্যামা পাওয়া যায়। দেশে যেহেতু একটাই প্রজাতির দোয়েল ও শ্যামা রয়েছে; তাই মুখে বলার সময় তাদের শুধু ‘দোয়েল’ এবং শুধু ‘শ্যামা’ বললেই চলে। কিন্তু লিখতে হলে পুরো নামটা বলতে হবে। আমরা সুস্পষ্টভাবে পাখি দু’টিকে আলাদাভাবে চেনার জন্য ইংরেজি নামের সঙ্গে মিলিয়ে বাংলা নামকরণ করেছি ‘উদয়ী দোয়েল’ (Oriental Magpic Robin) এবং ‘ধলা-কোমর শ্যামা’ (White-ruped Shama)।
 
বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, গ্রাম-শহরসহ দেশের সর্বত্র দোয়েল পাওয়া গেলেও শ্যামা কিন্তু শুধু বনেই পাওয়া যায়। এরা একেবারে বনের পাখি। নিজের এলাকার গাছের ডালে বসে এলাকাটিকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদিন ধরে গান করতে গাইতে থাকে। তবে তার গানের স্বর মৃদু। স্বর শুনে বনে হাঁটার সময় আমরা বুঝতে পারি এটি শ্যামার ডাক। আবার কিছু দূর অগ্রসর হলে আরেকটি এলাকায় অপর একটি শ্যামা ডাকে। এই ডাকে মাধ্যমেই ওই বনে শ্যামার উপস্থিতি আমরা বের করি, জানান তিনি।
 
ডালে বসে ডাকছে ধলাকোমর-শ্যামা।  ছবি : সাঈদ বিন জামালশ্যামা পাখির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তিনি বলেন, শ্যামার দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন ৩৩ গ্রাম। এদের পিঠ কালো, পেট লাল ও কোমর সাদা। পুরুষের মাথা, বুক, পিট, ডানা ও লেজ চকচকে কালো এবং পিট ঘন লাল। স্ত্রীর বর্ণ কিছুটা ফিকে।
 
এদের খাদ্য তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও পোকা। এগুলো আমাদের বনে এখন কমে গেছে বলে শ্যামাদের অবস্থায় কিছুটা বিপন্ন বলে জানান পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।    
 
মৌলভীবাজার রেঞ্জের কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী আদমপুর বিট থেকে শ্যামা পাখির ছবিগুলো তুলেছেন বলে জানান সৌখিন আলোকচিত্রী সাঈদ বিন জামাল।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৮
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।