চা বাগানে প্রতিটি সন্ধ্যার আগমুহূর্তে খেঁকশিয়ালদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। গর্ত বা গোপন আস্তানা থেকে বেরিয়ে এরা একে-অপরকে ডাকতে শুরু করে।
একটি ডাক দিলে, অপরটি সেই ডাকে সুর মেলায়। তারপর অন্যগুলোও। এভাবে অল্পক্ষণের মাঝে পুরো এলাকা শিয়ালময় হয়ে ওঠে। শিয়ালদের কেউ কেউ আবার কিছুটা সাহসী। গাড়ি বা যানবাহন পাশ দিয়ে চলে গেলেও ভয় পায় না তেমন।
হঠাৎ হঠাৎ নিস্তব্ধ রাতে বহু দূর থেকে শিয়ালের ডাক ভেসে আসে। ওরা হয়তো একই উদ্দেশ্যে অভিন্ন স্বরে চিৎকার জুড়ে দিয়ে নিজের স্বরাট উপস্থিতির ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। মা তখন তার ঘুমে-জ্বালাতন করা সন্তানটিকে সেই দূর থেকে ভেসে আসা ডাকগুলো শুনিয়ে বলেন, ‘ওই যে শেয়াল ডাকছে; ঘুমিয়ে পড়ো তাড়াতাড়ি। ’
সৌখিন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী সাঈদ বিন জামাল বাংলানিউজকে বলেন, এদের শিয়াল বা খেঁকশিয়াল অথবা পাতিশিয়াল বলা হয়। এরা হচ্ছে Canidae পরিবারের এক জাতীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী। ইংরেজি নাম Golden Jackal/Asiatic Jackal /Common Indian Jackal এবং বৈজ্ঞানিক নাম Canis aureus।
আকৃতি ও আবাস সম্পর্কে তিনি বলেন, দৈর্ঘ্য ৬০ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার। লেজ ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। মূলত নিশাচর, তবে দিনেও দেখা মিলে। সচরাচর দলে থাকে, তবে একাকী বা জোড়ায়ও দেখা যায়। আবাস গ্রামীণ বন, কৃষিখামার, ঝোপ, ঘন ফলবাগান ইত্যাদি। আয়ুষ্কাল ১০ থেকে ১৫ বছর। বছরে দু’বার এরা বাচ্চা প্রসব করে।
মৌলভীবাজার রেঞ্জের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) তবিবুর রহমান বলেন, শুধু চা বাগানেই নয়; আমাদের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রচুর পরিমাণে শিয়াল রয়েছে। এখানে ঝোপঝার লতাগুল্ম বেশি থাকায় ওরা খুব সহজে দিনের আলোয় লুকিয়ে থাকে। এদের দেহে হলুদ, লালচে ও বাদামি রঙের উপস্থিতি থাকায় অদ্ভুত লাগে দেখতে।
খাদ্যাভাস সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা সাধারণত মাংসাশী ও সর্বভূকপ্রাণী। এদের প্রধান খাবার মুরগি, হাঁস, বুনো খরগোস প্রভৃতি। তবে এরা আমাদের প্রকৃতির পরিশুদ্ধকারী। মরা-পচা প্রাণীর দেহ বা শরীরের পড়ে থাকা অংশ খেয়ে প্রকৃতিকে সুরক্ষিত করে।
আমাদের ধারণা, ওরা লাউয়াছড়ার বসবাসকারী মায়াহরিণের বাচ্চাগুলো চুরি করে খেয়ে ফেলে। তবে এর ফলে মায়াহরিণও একেবারে কমে যাচ্ছে এটাও বলা যাবে না বলে জানান এসিএফ তবিবুর রহমান।
বাংলাদেশের সুপরিচিত এই প্রাণীটি একসময় সমগ্র দেশেই দেখা যেত, সুন্দরবনএর অভ্যন্তর ব্যতীত। কিন্তু বর্তমানে বন ও প্রকৃতি ধ্বংস, খাদ্যের অভাব, শিকার ও শহরায়নের ফলে পুরো বাংলাদেশজুড়ে প্রজাতিটির অবস্থা সংকটাপন্ন বলে বিবেচিত বলে জানান সাঈদ বিন জামাল।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৮
বিবিবি/এমজেএফ