এরপর শুরু হয় বাক্স খোলার পর্ব। জানা গেল, বাক্সের প্রতিটি সাপই অত্যন্ত ভয়ঙ্কর।
বুধবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে বগুড়া শহরের ঐতিহ্যবাহী আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে ‘বাংলার মুখ’ আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী বৈশাখী মেলার পঞ্চম দিনে আয়োজন করা হয় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় সাপের খেলা। সাপুড়ে খেলা প্রদর্শন করেন সন্ধ্যা পর্যন্ত। এ খেলার দর্শকরা বলছিলেন, এটি শুধু সাপ খেলা ছিল না, এটি ছিল যেন সাপ ও সাপুড়ের প্রেমের উপাখ্যান। মেলায় সাপুড়ে এসেছিলেন বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গাড়ীদহ এলাকা থেকে। নাম আলাল সেখ। সঙ্গী হিসেবে ছিল তারই দুই ছেলে আনোয়ার হোসেন (১০) ও হযরত আলী (৭)। এছাড়া আব্দুস সালাম নামের তার আরেকজন সহযোগী এসেছিলেন। ওস্তাদ বাবার সঙ্গে নেচে গেয়ে দুই ছেলে সাপ খেলা দেখিয়ে উপস্থিত দর্শকশ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন কয়েক ঘণ্টা। শহরের পুরুষদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক নারী দর্শকও উপভোগ করেন এ খেলা।
পাঁচটি বাক্সের চারটিতে গোমা এবং অপরটিতে দারাজ প্রজাতির সাপ রাখা ছিল। খেলা দেখাতে দেখাতে একসময় সাপুড়ে আলাল সেখের হাতে ছোবল বসিয়ে দেয় একটি গোমা। তবে সমস্যাটি সামলে নানা কায়দা-কৌশলে আবারও খেলা দেখাতে থাকেন তিনি। তবে তার দুই ছেলের খেলা দেখানোর ব্যাপারটি উপস্থিত দর্শকদের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কাটে।
সাপুড়ে আলাল সেখ বাংলানিউজকে জানান, ছোট বেলা থেকেই সাপ নিয়ে সাধনা শুরু করেন তিনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সাপ খেলা দেখানো যেন নেশা হয়ে যায়। সেই নেশায় সময়ের ব্যবধানে পেশা হয়ে যায়।
সাপ খেলা দেখাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান তিনি। মানুষকে সাপ খেলা দেখিয়ে বিনোদন দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিনিময়ে কিছু অর্থ উপার্জন হয়। এভাবেই সাপের সঙ্গে কেটে যাচ্ছে আলাল সেখ ও তার পরিবারের জীবন। যেখানেই ডাক পড়ে সেখানেই দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়ে যান তিনি।
সাপ ধরতে কোনো তন্ত্রমন্ত্র লাগে কিনা জানতে চাওয়া হলে আলাল সেখ বলেন, সাপকে বাগে আনার আসল মন্ত্র সাহস আর কৌশল। তবে প্রচুর অভিজ্ঞতা থাকার পরও অনেক সময় সাপের ছোবল খেতে হয়। যেমন আজকের খেলা দেখানোর সময়ও তা হয়েছিল। এতে সাময়িক সমস্যা হয়েছিল। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের বিপদের মুখোমুখি হইনি।
জাহাঙ্গীর আলম, শামীম হোসেন, সাথী খাতুন, সুমাইয়া আক্তারসহ একাধিক দর্শক বাংলানিউজকে জানান, সাপ যখন ফণা তুলে ফোঁস ফোঁস করে তখন ভীষণ ভয় লাগে। গোটা শরীর যেন শিউরে ওঠে! কিন্তু এরপরও সাপ খেলা দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। কেননা, সাপ খেলার কথা শুধু বড়দের মুখেই শুনে আসছিলাম। কিন্তু বাস্তবে এ খেলা দেখাতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
এমবিএইচ/এনএইচটি