তেঁতে উঠেছে আসবাবপত্রও। দুপুর গড়াতেই খাঁ খাঁ করছে পথ-ঘাট।
ওষ্ঠাগত গরমে মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও হাঁসফাঁস করছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলেও ঠাণ্ডা বাতাস না থাকায় খরতাপ মিটছে না। মঙ্গলবার বিকেলেও রাজশাহীতে ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। কিন্তু সেই বৃষ্টির পানি মানবকূলে প্রশান্তির পরশ বিলাতে পারেনি। বৃষ্টির পর পরই ভ্যাপসা গরেমে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে।
সারাদিন দাবদাহ আর সন্ধ্যার পর ভ্যাপসা গরমে রোজাদারদের প্রাণ এখন যায় যায় অবস্থা। সামান্য বৃষ্টিতে মন ভরছে রাজশাহীর তপ্ত প্রকৃতির। তাই গাছ-পালা ছুঁয়ে শীতলতা নামছেনা এই অগ্নিশালায়। সবুজ বৃক্ষরাজি তামাটে বর্ণ ধারণ করতে চলেছে।
শহরের দক্ষিণে থাকা পদ্মাপাড় থেকে ধূলিকণাগুলো যেন আগুনের স্ফূলিঙ্গ হয়ে উড়ে এসে পড়ছে মানুষের শরীরে। তবে পরিবেশ বিজ্ঞানিরা বলছেন, আঞ্চলিক কোনো সমস্যার কারণে আবহাওয়া এমন বিরূপ হয়ে ওঠেনি। এটা বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাব। বৃষ্টিপাত কম হওয়া প্রতি বছরই বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। এভাবে চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে জীবজগতের পরিণতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভূ-পৃষ্ঠের উষ্ণতা বাড়ছে। এটা আঞ্চলিক কোনো সমস্যা নয়। আমাদের কারণেই দিন দিন প্রকৃতি এমন খেয়ালি হয়ে উঠছে। অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে তাপমাত্রা।
প্রয়োজন থাকলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। বঙ্গোপসাগর থেকে মৌসুমী বায়ু সৃষ্টি হয়ে তা হিমালয়ে গিয়ে ধাক্কা লাগার পর মেঘমালা তৈরি হয়।
ওই মেঘমালা থেকে বৃষ্টি ঝরে। সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহে মৌসুমী বায়ু সৃষ্টি হয়। এবারও হয়েছে কিন্তু উষ্ণতার কারণে সক্রিয় হতে পারছে না।
এটি খারাপ লক্ষণ উল্লেখ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বের উপকূলবর্তী দেশগুলো আজ সবচেয়ে বেশি হুমকির সম্মুখীন। বাংলাদেশ তার একটি। চক্রাকারে ভূ-পৃষ্ঠের উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামী ১শ’ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়ে যাবে। প্রকৃতি আরও খেয়ালি আচরণ শুরু করবে।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশে মৌসুমী বায়ু ঢুকে গেছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহের মধ্যে তা সক্রিয় হবে। আর তা হলে রাজশাহীসহ সারাদেশেই স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে যাবে।
এতে তাপমাত্রাও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সাধারণত তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে বলা হয় মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৪০ উঠলে বলা হয় মাঝারি তাপপ্রবাহ।
আর ৪০ এর ওপরে উঠেলে বলা হয় তীব্র তাপপ্রবাহ। বুধবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এদিকে, রাজশাহীতে তীব্র গরমের দাপটে বর্তমানে শিশু ও বৃদ্ধরা কাহিল হয়ে পড়েছে। অব্যাহত তাপমাত্রায় ঘরে ঘরে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এসব রোগে বৃদ্ধ ও শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৮
এসএস/এসএইচ