বলাবাহুল্য, শুধু বৃক্ষকূলেই নয় পরগাছারা মানবকূলেও ভর করে থাকে। কৌশলে, সবার অলক্ষ্যে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টায় থাকে আপন আপন সুযোগ-সুবিধাগুলো।
এ গাছ খাওয়া গাছটিকে কিংবা আপন অস্তিত্ব হারাতে বসা গাছটিকে খুঁজে পাওয়া যাবে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। লাউয়াছড়ায় প্রবেশমুখের একটু পূর্বে পাকারাস্তা সংলগ্ন হাতের ডানদিকে এই দুটো গাছকেই খুঁজে পাওয়া যাবে। একটি বড় আকারের সেগুন গাছের শরীরে ভর করেছে একটি বটবৃক্ষ।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বিট কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, সেগুনগাছটাকে গ্রাস করে ফেলেছে বটগাছটি। আর দু-এক বছরের মধ্যেই সেগুনগাছটি তার অস্তিত্ব হারাবে। কোনো পাখির মল থেকে নির্গত বট গাছের ফল থেকেই জন্মলাভ করেছে এই পূর্ণাঙ্গ বটগাছটি। ধীরে ধীরে সে সেগুন গাছটাকে হত্যা করে দাঁড়িয়ে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, এটি স্বাভাবিক ঘটনা। সাধারণত বট জাতীয় গাছগুলো মাটিতে জন্মলাভ করে না। তবে আরেকটি ভিন্ন প্রক্রিয়ায় এগুলো জন্মলাভ করে এবং প্রকৃতিতে টিকে থাকে। আর এই ভিন্ন প্রক্রিয়াটাই হচ্ছে- পশুপাখিরা যখন বটফল খায় তখন তাদের মল বা বিষ্ঠার ভেতর দিয়ে ফলগুলো নির্গত হয়েই বটগাছ জন্মলাভ করে। গাছের উপর, দেয়ালে বা অন্য কোনো স্থানে অর্থাৎ যেখানেই পশুপাখিরা মল ত্যাগ করে সেখানেই এটি অঙ্কুরিত হয়।
পশুপাখিদের পেটের ভেতর দিয়ে গেলেই ফলটির ‘জার্মিনেশন’টা খুব সহজ হয়। এমনিতে নরমালভাবে বীজগুলো সহজে মাটিতে পড়ে ‘জার্মিনেট’ করে না। পাখির বিষ্ঠা থেকে গাছে পড়ার কিছুদিন পরই নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আবহাওয়ার আর্দ্রতা প্রভৃতি যখন তার অনুকূলে আসে তখন সেই পরিবেশের উপর ভিত্তি করে বীজটি হতে চারা প্রস্ফূটিত হয়। তারপর সেই চারাটি যে গাছে জন্মে সেই ‘হোস্ট-গাছ’টির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
গাছটি ধীরে ধীরে বড় হয়ে পাতা দিয়ে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি সে যে গাছে জন্মে সেই হোস্ট-গাছের ভেতর শেকড় গেঁথে পানি এবং খনিজ লবণ আহরণ করতে থাকে। ফলে হোস্ট-গাছটি আস্তে আস্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বটগাছটি বেড়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে হোস্ট-গাছের আর অস্তিত্ব থাকে না। বটগাছটি এভাবেই প্রতিষ্ঠা লাভ করে বলে জানান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮
বিবিবি/আরআর