ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

লোকালয়ে লাউয়াছড়ার অজগর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৮
লোকালয়ে লাউয়াছড়ার অজগর লাউয়াছড়ার অজগর। ছবি : বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: বন্যরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে-এ প্রবাদটি আজ বুঝি মিথ্যে হতে বসেছে। বনের প্রাণীরা আর বনে থাকছে না। তারা লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে ধরা পড়েছে। কখনওবা প্রাণও হারাচ্ছে।

শনিবার (২০ অক্টোবর) লাউয়াছড়ার একটি অজগরকে উদ্ধার করে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর বিকেলে শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ রোডে গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট আন্ড গলফ্ এর পাশে লিচুবাড়ি এলাকা থেকে আরেকটি অজগর উদ্ধার করে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হয়।


 
লাউয়াছড়া থেকে কেন বের হয়ে আসছে অগজর-এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। দু’টি কারণকে চিহ্নিত করে তা তুলে ধরা হয়।
 
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণি গবেষক ড. কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সব ফরেস্টেই কিন্তু একটা ক্যারিং-ক্যাপাসিটি রয়েছে। এর অতিরিক্ত সে ধারণ করতে পারবে না। ক্যারিং-ক্যাপাসিটি যে শুধু জায়গার উপর নির্ভর করে তা নয়। যেমন- অজগর তো নরমালি মাঝারি আকারের হরিণ, শুকর, প্রভৃতি স্তন্যপায়ী প্রাণি খেয়ে সে বাঁচবে।
 
‘লাউয়াছড়ায় দুই ধরনের সমস্যা ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠছে। যার ফলে অজগরসহ অন্য বন্যপ্রাণি লাউয়াছড়া থেকে বের হয়ে লোকালয়ে চলে এসে মানুষের হাতে ধরা পড়েছে। একটি সমস্যা হলো- লাউয়াছড়ায় দৈনিক মাত্রাতিরিক্ত পর্যটকের অনুপ্রবেশ। যার ফলে বন্যপ্রাণিরা বিরক্ত হবে। বিরক্ত হলে সে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে পারবে না। ’
 
‘আরেকটি কারণ হলো- সবকিছুই লাউয়াছড়াতে অবমুক্তকরণ। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে যেসব বন্যপ্রাণি ধরা পড়ছে তার প্রায় সবকিছুই ধরে এনে লাউয়াছড়াতে ডাম্পিং করা হয়। ‘যা আছে এনে শুধু লাউয়াছড়াতেই ছাড়ো’ এমন ভুল সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিন ধরে পালিত হয়ে আসছে। কিন্তু আমরা কখনেই চিন্তা করি না যে, যারা অলরেডি লাউয়াছড়াতে আছে নতুন প্রাণীদের ধরে এসে হঠাৎ করে এখানে ছাড়া হলে তাদেরও ক্ষতি হবে। ক্যারিং-ক্যাপাসিটি যদি একজিস্ট করে তাহলে তো বন্যপ্রাণীরা খাবারের সন্ধানে বনের আশপাশে যাবেই। ’
 
তিনি আরও বলেন, অজগর কিন্তু টেরিটরি বা ফরেস্টের বর্ডার লাইনে অর্থাৎ (বনের সীমানার শেষভাগ) ধরা পড়ে। তার কারণ হলো ওখানে বেশি পরিমাণে শিকার পাওয়া যায়। যেমন ধরেন- বড় সাইজের যে ইঁদুরগুলো তা টেরিটরির দিকেই বেশি থাকে। এর কারণ হলো- এখানে দু’টো ইকো-সিস্টেমের ট্রানজিসন থাকে। এখানেই রোড অ্যান্ড পপুলেশন বেশি থাকে। এছাড়াও দেখবেন যে বনের আশপাশের গ্রামগুলো হাঁস-মুরগি বা গৃহপালিত জীবজন্তু খেতে আসে।
 
‘আমি এ বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত নই তারপরও ধারণ থেকে বলছি- এমনও হতে পারে যে, লাউয়াছড়ায় যতগুলো অজগর থাকার কথা তার থেকে বেশি সংখ্যায় বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে এনে লাউয়াছড়ায় ডাম্পিং (অবমুক্ত) করা হয়েছে। যার ফলে অজগরগুলো তাদের বেঁচে থাকার তাগিদে বন থেকে বেরিয়ে আশপাশে চলে আসছে। ’
 
মূলত ফরেস্টের ক্যারিং ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে এবং ফরেস্টে প্রাণিকে যেন কেউ বিরক্ত না করে তা সে পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে আনকন্ট্রোল ট্যুরিজম যেটা হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক পর্যটককে অনুমতি দেওয়া উচিত বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বন্যপ্রাণী গবেষক ড. কামরুল হাসান
    
বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, ২১ অক্টোবর, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।