ওই দুর্ধর্ষ পাখিটির নাম হলো ‘উদয়ী-মধুরাজ’। এ পাখিগুলো টার্গেট হলো মৌমাছির চাকে হামলা চালিয়ে মধু ও চাক খাওয়া।
এর ইংরেজি নাম Oriental Honey Buzzard এবং বৈজ্ঞানিক নাম Pernis ptilorhyncus।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘হানি-বার্জাড’ এ ধরনের শিকারী পাখি। সারাবছর এদের দেখতে পাবেন না। সারাদেশে আছে। তবে শীতকালে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। ‘হানি-বার্জাড’ এর খাবারও হলো মৌচাক। এর মৌমাছির মধুচাকে অতর্কিত হামলা চালিয়ে মধু খায় এবং চাকটাও খায়।
ইনাম আল হক আরও বলেন, ‘হানি-বার্জাড’র শরীর পুরোপুরিভাবে পালক দিয়ে ঢাকা। ফলে মৌমাছির চাকে আক্রমণ করলেও মৌমাছিরা ‘হানি-বার্জাড’র শরীরে হুল ফুটাতে পারে না। কারণ, পালকের উপর তো হুল ফুটানো সম্ভব নয়। শুধু ওর শরীরের একটি জায়গা তাহলো চোখের পাশ অর্থাৎ চঞ্চু’র (ঠোঁট) ছোট্ট জায়গাটা। আর থাকলো পায়ের শক্ত অংশ, এটাতেই হুল ফুটানো সম্ভব নয়। আসলে ওর শরীরে খোলা জায়গা নেই, সবই পালকে ঢাকা। তাই মৌমাছিরা সুবিধা করতে পারে না।
মৌচাক ছাড়াও মাটিতে ইঁদুর, ছুঁচো, আহত ছোটপাখিসহ অন্যান্য ছোট প্রাণীদের ‘হানি-বার্জাড’ ধরে ধরে খায় বলেও জানান ইনাম আল হক।
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইনাম আল হক বলেন, গাছের ডালে, দালান কোঠার কার্নিশের নিচে বাসা হলে ভালো করে লক্ষ্য করলে অনেক সময় দেখা যায় এগুলোর আশ-পাশে ‘হানি-বার্জাড’ চুপ করে বসে রয়েছে। আমি বেশ কয়েকবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ-পাশের মৌচাকে ‘হানি-বার্জাড’কে বসে থাকতে দেখেছি। সুযোগ পেলেই সে মৌচাকে দ্রুত আক্রমণ করে বসে। তারপরও মৌমাছিদের আক্রমণের বিষয়ে ‘হানি-বার্জাড’ প্রচুর সর্তক থাকে। হিসেব-নিকেশ করেই সে মৌমাছিদের দুর্গে হামলা চালায়। চাক ভেঙে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পর কিছু কিছু মৌমাছিদেরও তার পেছনে উড়তে দেখেছি। তবে পাখিটিকে মৌমাছির দ্বারা আক্রান্ত হতে কখনো দেখিনি।
শারীরিক বর্ণনায় তিনি বলেন, এদের আকার প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার এবং দেহ কালচে-ধূসর। থুতনিতে লম্বা সাদা রং। ডানার নিচে সারি সারি কালো লাইন। চোখ কমলা লাল এবং পায়ের আঙ্গুল হলুদ। পুরুষ পাখিটির লেজে দুটো প্রশস্ত কালো ফিতা এবং স্ত্রী পাখিটির লেজে দু’টি কালো ফিতা রয়েছে।
কোনো গাছের গোপন জায়গায় মৌমাছির নতুন বাসা হয়েছে এমন কোনো স্থানে আপনি যদি কয়েকদিন যান তবে এই ‘হানি-বার্জাড’ মৌচাকের আশপাশে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে জানান প্রখ্যাত পাখিগবেষক ইনাম আল হক।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৯
বিবিবি/এএটি