কুকুরছানা থেকে শুরু করে প্রতিটি অসুস্থ বন্যপ্রাণী বা গৃহপালিত বিপন্ন প্রাণীকে পরম মমতায় মাতৃস্নেহে সুস্থ করে তুলছেন সব সময়। এই কাজে তিনি ছিলেন অবিচল ও বিরামহীন।
মার্চ মাসের ১ তারিখ তানিয়া হঠাৎ করে অবচেতন হয়ে পড়ে যান। স্থানীয় সাংবাদিক, বন্যপ্রাণীপ্রেমী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে ভর্তির পর পরীক্ষানিরীক্ষা করে তার হার্টে দু’টি বড় ব্লক ধরা পড়েছিল। মৌলভীবাজার জেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চারদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পর কিছুটা সুস্থ হলে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়।
বাসায় ফিরেই তিনি শুনতে পান– মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী রেঞ্জ ৮/১০ দিনের একটি ছোট্ট মেছোবাঘের ছানাকে উদ্ধার করেছে। তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সেই ছোট্ট মেছোবাঘের ছানাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন এবং মায়ের মমতায় সেবাযত্ন করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বুধবার সকালে সব এলোমেলো হয়ে গেলো। মা-হারা মেছোবাঘটি আবার ‘মা’ হারালো। তানিয়া খান চলে গেলেন তার প্রিয় জগৎ ছেড়ে।
মৃত্যুর দু’দিন আগে তানিয়া খান বলছিলেন- আমি আর মেছোবাঘের ছানা দু’জনেই টিকে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কে সারভাইভ করবো জানি না।
সোমবার (১১ মার্চ) বাংলানিউজের সঙ্গে শেষ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, মেছোবাঘের সেই ছোট্ট ছানাটা আগের থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে। এক সপ্তাহের মতো সে আমার কাছে রয়েছে। এখন নিজ থেকেই সে একটু একটু হাঁটার চেষ্টা করে এবং মোটামুটি হাঁটে। ৪ মার্চ আমি হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার সময় বন্যপ্রাণী অফিস থেকে যখন নিয়ে এসেছিলাম তখন তার বয়স ৮-১০দিন। ঠিকমতো চোখ ফোটেনি; হাঁটতে গিয়ে পড়ে যেতো। এই মেছোবাঘের এত্ত ছোট ছানাটিকে লালনপালন আমার জীবনের সবচেয়ে উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা। ’
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) শামসুল মুহিত চৌধুরী তানিয়া খান প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, তার মৃত্যুতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। বন্যপ্রাণীদের প্রতি একজন মানুষের এতো ভালোবাসা, দিনের পর দিন তাদের সেবাযত্ন করে যাওয়ার ধৈর্য এগুলো অনেক বড় ব্যাপার– সহজে কারো মধ্যে দেখা যায় না। তার মাধ্যমে আমাদের বিপন্ন বন্যপ্রাণীগুলোর প্রত্যেকেই দ্বিতীয়-জীবন লাভ করেছিল।
মৃত্যুর আগপর্যন্ত সেবাশুশ্রুষা করে যাওয়া তানিয়া খানের সেই মেছোবাঘ ছানাটি এখনো সুস্থ আছেন বলে ডিএফও শামসুল মুহিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৯
বিবিবি/এএ