ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

মৃত্যুর রাতেও মেছোবাঘছানার খেলাঘর বানান তানিয়া 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৯
মৃত্যুর রাতেও মেছোবাঘছানার খেলাঘর বানান তানিয়া  এই কাঠের টুকরোটিকে মেছোবাঘের ছানার জন্য ছিদ্র করছিলেন তানিয়া। ইনসেটে মেছোবাঘছানা কোলে তানিয়া

মৌলভীবাজার: অন্ধকার ঘর। তাতে সবগুলো জানালা-দরজা বন্ধ। সেই ঘরেই থাকে নানা প্রজাতির বিদেশি পোষা পাখি। ঘরের সামনে আসতেই পাখিদের কিচিরমিটির শোনা গেলো। বাড়ির দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক ঘরের দরজার খুলে আলো জ্বালাতেই পাখিগুলো একতসঙ্গে চিৎকার করে উঠলো! 

এই চিৎকারের অর্থ কি- ঘরে অচেনা কারোর আগমন? আর সেজন্য তীব্র নালিশ! 

বুধবার (১৩ মার্চ) ভোরে হঠাৎ হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান বন্যপ্রাণী গবেষক এবং ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা বন্যপ্রাণী সেবাকেন্দ্র ‘সোল’ (সেভ আওয়ার আনপ্রোটেক্টেড লাইফ) এর পরিচালক তানিয়া খান।  

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে মৌলভীবাজারের পূর্ব-দক্ষিণ কালেঙ্গা নামক স্থানে তানিয়া খানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়িটির চারপাশের মানুষ শোকাচ্ছন্ন।

বাড়িটিও নীরব-নিঃস্তব্ধ। শুধু তার পোষা পাখিগুলো চিৎকার করে মাঝে মাঝে ডেকে উঠছে।  

তানিয়া খানের পোষা বিদেশি পাখিরাদূর-দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করে আনা অর্কিডসহ বিভিন্ন গাছের চারা মাথা তুলে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কোনো গাছে এসেছে ফুল। নানা রঙের, নানা বর্ণের। সেই ফুলের মধু সংগ্রহ করতে মাঝে মধ্যে ছুটে আসছে নানান মৌমাছি আর প্রজাপতি।  

তানিয়া খানের বহুদিনের পরিচিত ওই এলাকার সিএনজি অটোরিকশাচালক সাদেক মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনিই মূলত এখন এই বাড়িটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তিনিই প্রথম দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখেছিলেন তানিয়া খান মৃত অবস্থায় তার বিছানায় পড়ে আছেন।  

তানিয়া লাগানো গাছে ফুটেছে সুদৃশ্য ফুলসাদেক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, তানিয়া আপার সঙ্গে আমার ১৮ বছর ধরে পরিচয়। বর্তমানে আমি ওনার বাসাটি দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছি। আমার অটোরিকশায় করে তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমি ওনার বাসায় এসে দেখি আপা বারান্দায় বসে একটা কাঠের টুকরোকে ছিদ্র করছেন। জিজ্ঞেস করতেই তিনি আমাকে বলেন, মেছোবাঘের ছানাটি এই কাঠের টুকরোর ছিদ্র দিয়ে খেলাধুলা করতে পারলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে। আর ওই রাতেই তিনি মারা গেলেন।

তানিয়া কবর প্রসঙ্গে সাদেক মিয়া বলেন, প্রথমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে কালেঙ্গাতেই কবর দেওয়া হবে; আমরা এখানে তার কবরও খুঁড়েছিলাম। কিন্তু বুধবার রাতে আপার মেয়ে ঢাকা থেকে এসে আপার মরদেহ ঢাকায় নিয়ে গেছেন। তবে তানিয়া আপা একবার কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে- তিনি মারা গেলে তার মাটি যেন তার এই বাড়ির আশপাশে হয়।

বাড়ির দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক সাদেক মিয়াসাদেক মিয়ার ছোট ছেলে ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া সৌরভ তানিয়া খান সম্পর্কে বলেন, আন্টির ৭টি কুকুরের জন্য আমাদের বেশি কষ্ট হচ্ছে। এই কুকুরগুলোর নাম হলো- স্নো, জ্যাক, ব্রেভ, ক্লোড, টু-ইউ, রে এবং উলফি। স্লো আর ব্রেভকেই আদর করতেন বেশি। যেখানেই কুকুরের ছানা পেতেন তুলে নিয়ে আসতেন।  

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) শামসুল মুহিত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সবশেষ যে মেছোবাঘের ছানাটিকে তানিয়া সেবাশুশ্রুষা করছিলেন তাকে আমরা নিয়ে এসেছি। লাউয়াছড়ায় অবস্থিত জানকিছড়ার রেসকিউ সেন্টারে সে আছে। আমরা গুরুত্বসহকারে তার দেখাশোনা করছি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৯ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।