ডারবান, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে: একটি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী ঢাকা থেকে ডারবানের আকাশ পথের দুরুত্ব মাইলের হিসেব অনুযায়ী ৬হাজার৩০৫ মাইলের মতো আর কিলোমিটারে হিসেব করলে তার দুরুত্ব ১০হাজার কিলোমিটারের একটু বেশি। প্রায় ২৪ ঘণ্টার ভ্রমণের পথে মনে হচ্ছিল আসলেই কী কোন লাভ আছে এই সব কনফারেন্স করে? নাকি করতে হবে বলে করছি।
১৯০ টির বেশি দেশ তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা করছে। এত সব ভাবতে ভাবতেই তরুণদের সম্মেলন কনফারেন্স অফ ইয়ুথ-এ যোগ দিলাম। এখানে এসেই মনে হল ঢাকা থেকে ডারবানের দুরুত্ব যত বেশি তার চেয়ে আমাদের স্বপ্ন অনেক বেশি। এবং এই স্বপ্ন যে আসলেই মিথ্যা নয় তা বোঝা যায় যখন দেখি আমাদের মত জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশের জন্য কথা বলছে যুক্ত্ররাষ্টের তরুণরা, তাদের পাশে আছে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, চীন, জাপান, সুইডেন, ভারতসহ উন্নত, উন্নয়নশীল, স্বল্পোন্নত দেশের তরুণরা।
সবার একই কথা, জলবায়ু সংক্রান্ত সঠিক সিদ্ধান্ত সবারই প্রাপ্য। এক দেশের দূষণের জন্যে আরেক দেশের ক্ষতি হতে পারে না, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বন্ধে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। তরুণদের দায়িত্ব অনেক বেশি, কারণ তারাই যে ভবিষ্যতের নাগরিক। কনফারেন্স অফ ইয়ুথের এত সব আলোচনা হচ্ছে ইউনিভার্সিটি অফ কওয়াজুলু নাটালের ক্যাম্পাসে। যেখানে ৪০ দেশের প্রায় ৮৬০ তরুণ তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে।
কনফারেন্সের আয়োজক জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সংস্থা ইউএনফসিসিসির তরুণদের প্রতিনিধিত্বকারী ইয়োংগো (ইয়ুথ এনজিও)। ২৫ নভেম্বর শুরু হওয়া এই কনফারেন্স শেষ হবে ২৭ নভেম্বর।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি পুরো আয়োজনটির সকল প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে অনলাইনে, কখন ইমেইলে, কখন ফেসবুকে কখনো আবার স্কাইপিতে।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে তরুণরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সময় দিয়েছে এই আয়োজনটি সফল করার জন্য। তেমনই একজন অস্ট্রেলিয়ার ইয়ুথ ক্লাইমেট কোয়ালিশনের শার্লোট উড।
তিনি বলছিলেন, “আমরা কনফারেন্স অব পার্টিজ (সদস্য দেশগূলোর সম্মেলন ) এর কনফারেন্স অফ ইয়ুথের আয়োজন করেছি যেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া তরুণরা তাদের দক্ষতা, কাজ এবং ভাবনা একে অপরের সাথে বিনিময় করত পারে, এবং সম্মেলনে একটি শক্তিশালী অন্দোলন গড়ে তুলে পারে। আমাদের নিজেদের ভবিষ্যতের জন্যই আমাদের আসতে হবে বলে তিনি জানান।
কনফারেন্স অফ ইয়ুথে অংশ নেওয়ার জন্য ১৬১ জন তরুণদের একটি দল আফ্রিকান ক্লাইমেট ক্যারাভ্যান নিয়ে ডারবানে আসে। প্রায় ১২টি দেশের তরুণরা আফ্রিকার ১০টি দেশ পাড়ি দিয়ে ডারবানে আসে এবং আসার পথে জলবায়ু ন্যায্যতার বিভিন্ন দাবিগুলো সাধারণ মানুষ কে জানিয়ে আসে। এখানে এসেই দেখা পেলাম বাংলাদেশি বংশোধভুত তরুণ নেলসন ত্রিপুরার যার বর্তমান নাম ওস্কার নেলসন। সুইডেন ওয়াইএমসিএ দলের সদস্য হয়ে কনফারেন্সে অংশ নিচ্ছে নেলসন, বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলতেই জানালো বাংলাদেশের মত স্বল্পোন্নত দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার সামর্থ্য নিয়ে তার চিন্তার কথা, আরো বলল সুইডেনের পুরোতন হয়ে যাওয়া জিনিস গুলো যেগুলো অনেক বেশি কার্বন উৎপন্ন করে তা দেশের সরকার বিভিন্ন স্বল্পোন্নত দেশে পাঠিয়ে দেয় যা একেবারেই উচিত নয়।
সম্মেলনে আসা তরুণদের অনুপ্রাণিত করার জন্য বিভিন্ন সামাজিক অন্দোলনের একনেতাই তাদের সমর্থন জানিয়েছেন। আগামীকাল তরুণদের সাথে কথা বলবেন পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রিনপিসের সাবেক মহাসচিব কুমি নাইডু।
শুধুমাত্র আলোচনা নয় বিভিন্ন মজার মজার ইভেন্ট ও কর্মসুচির মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রতিভা কে প্রমান করছে তরুণরা। আফ্রিকায় এসে ওয়াকা ওয়াকার সাথে সবাই একবার নেচেই নিলো পরের দিনের জন্য নিজেকে তৈরি করার জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৬ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০১১