আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী এরা ‘বিপদাপন্ন’ প্রাণী।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা থেকে এ ছবিগুলো তুলেছেন সৌখিন বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী পিয়াস কান্তি সাহা।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সকালে গ্রামে হাঁটতে বের হয়ে এ বড় গন্ধগোকুলের দেখা পেয়েছি। খুব দ্রুতই নিজেকে আড়াল করে ফেলেছিল সে। বহু কষ্টে এ ছবিগুলো তুলেছি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বন্যপ্রাণী গবেষক দিলীপ কুমার দাস বিসর্গ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি ‘বড় গন্ধগোকুল’। Large Indian Civet এর ইংরেজি নাম। এরা দেশের সর্বত্রই বনাঞ্চল বা বন সংলগ্ন ঝোঁপঝাড়, গ্রামাঞ্চলের প্রভৃতি এলাকায় পাওয়া যায়। তবে এরা যে খুব ভালো অবস্থানে আছে তা বলা যাবে না। এরা মানুষের গৃহপালিত হাঁস-মুরগি ধরে নিয়ে যায় বলে মানুষ এদের ফাঁদ পেতে ধরে হত্যা করে। আবার অনেক সময় রাস্তা পারাপারের সময় দুর্ঘটনায় মারা যায়। এর ফলে এদের অস্তিত্ব কিছুটা হুমকির মুখে। এদের বিপদাপন্ন বলা যেতে পারে। ’
এদের স্বভাব সম্পর্কে এ বন্যপ্রাণী গবেষক বলেন, ‘এরা নিশাচর প্রাণী। দিনের বেলা এরা চুপচাপ থাকে। দিনে বেশিরভাগ সময় গাছের উপরে, বা মাটির গর্ত অথবা পাতার বড় স্তূপাকার জায়গার মধ্যে ঘুমিয়ে কাটায়। সমস্ত ‘সিভেট’ই নিশাচার এবং গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু এ ‘লার্জ ইন্ডিয়ান সিভিট’ গাছে গাছে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি মাটিতে ঘুরে বেড়ায়। এরা দলে থাকে না। রাতে এরা একা একাই ঘোরাফেরা করে। ’
উল্লেখযোগ্য তথ্য সম্পর্কে সহকারী অধ্যাপক দিলীপ কুমার দাস বিসর্গ বলেন, ‘এক সময় পারফিউম ইন্ডাস্ট্রিতে সুগন্ধি হিসেবে ‘সিভিট’ এর খুবই চাহিদা ছিল। ওর লেজের নিচে একটি গন্থি রয়েছে; যা দিয়ে সে অনেকটা পোলাওয়ের চালের মতো এক প্রকারের গন্ধ ছড়ায়। এ গন্ধের জন্যই এর নাম ‘সিভিট’ হয়েছে। অন্যান্য প্রজাতির সিভিটের থেকে ‘লার্জ ইন্ডিয়ান সিভিট’ থেকে বেশি গন্ধ নির্গত হয়ে থাকে বলে পারফিউম ইন্ডাস্ট্রিতে ‘লার্জ ইন্ডিয়ান সিভিট’ এর খুব কদর ছিল। ’
আরেকটি মজার ব্যাপার হলো- বনজঙ্গল বা গ্রামাঞ্চলের ঝোঁপঝাড়ের পাশ দিয়ে আপনি যাওয়ার সময় যদি হঠাৎ পোলাওয়ের চালের মতো গন্ধ আপনার নাকে আসে, তাহলে বুঝতে হবে আপনার আশপাশেই গন্ধগোকুল রয়েছে। অথবা অল্প কিছুক্ষণ আগেই আপনার আশপাশ দিয়ে ওরা চলে গেছে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক দিলীপ কুমার দাস বিসর্গ।
পরিবেশের গুরুত্ব তুলে ধরে সহকারী অধ্যাপক দিলীপ কুমার দাস বিসর্গ বলেন, পরিবেশে কিন্তু গন্ধগোকুল বেশ ভূমিকা রাখে। খাদ্যশৃংখলের একদম শীর্ষে অবস্থান তার। পিরামিডের মতো সে একদম মাথায় অবস্থায় করছে। মূলত এরা কৃষির ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে এবং ফলমূল খেয়ে এর বীজ বিস্তারের মাধ্যমে পরিবেশের প্রচুর উপকার সাধন করে থাকে। যেমন- বটফল বা অন্যান্য ফল তারা যখন খায় তখন এর মলের দ্বারা নির্গত সেই বীজগুলো সফল উদ্ভিদে পরিণত হয়। অর্থাৎ এর পেটের ভেতর দিয়ে ফলের বীজগুলো ‘জার্মিনেশন’ হলে তা পরবর্তীতের বীজের অংকুরোগদমে শতভাগ কার্যকরী হয়ে থাকে।
কবিরাজি চিকিৎসায় গন্ধগোকুলের তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী এর গুরুত্বের দিকটি তুলে ধরে এ প্রাণীটিকে হুমকির মুখে ঢেলে দিয়েছে। অথচ গন্ধগোকুলের তেলসহ অন্যান্য সামগ্রীর উপকারিতার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তি নেই। সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে প্রকৃতির এ উপকারী প্রাণীটিকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক দিলীপ কুমার দাস বিসর্গ।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৯
বিবিবি/আরবি