দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে ২৮ নভেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ১৭ তম জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন। ডিসেম্বরের ৯ তারিখ পর্যন্ত চলবে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক এ সম্মেলন।
এবারের সম্মেলন একটি কারণে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের উষ্ণায়নের মাত্রা কমানোর লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত কিয়োটো প্রটোকলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ২০১২ সালে। কিয়োটো প্রটোকল বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় দুর্বল দিক হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনের মত শিল্পোন্নত দেশগুলো একে অনুমোদন করেনি। কিয়োটো প্রটোকলের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করা ও আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করার দাবি করে আসছে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলো। রাশিয়া, ফ্রান্স, জাপান ও কানাডা ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা কিয়োটো প্রটোকলের নতুন মেয়াদে যোগ দেবে না। ফলে, এবারের আলোচনা থেকে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাবার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে ক্ষতিগ্রস্থ দেশের প্রতিনিধিগণ।
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। উপকূলীয় অনেক এলাকাতে এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব স্পষ্ট এবং দিন দিন তা বেড়ে চলেছে। নিজেদের স্বার্থে তাই জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত করা প্রয়োজন। ক্ষতিগ্রস্থ অন্য দেশগুলোর সাথে এ ব্যাপারে কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন এবং সম্মেলনে সংঘবদ্ধ, জোরালো ও যৌক্তিক দাবি উপস্থাপনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা যেতে পারে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধির অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণ সমাজের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে বিশ্ব-নেতৃবৃন্দের সাথে যোগ দেয় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা। তবে ভবিষ্যত নেতৃত্বের কর্ণধার হিসাবে ইদানিং তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্মেলনগুলোতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত বিশ্বের শত শত তরুণ যোগ দিচ্ছে এবার। যদিও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে; সে তুলনায় সম্মেলনে বাংলাদেশি তরুণ প্রতিনিধির সংখ্যা অত্যন্ত কম- মাত্র ২ জন অংশগ্রহণ করছেন ডারবান সম্মেলনে। এদের একজন বাংলাদেশ ইয়ুথ মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট এর উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ আল রেজওয়ান নবীন।
জলবায়ু সম্মেলনে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা সরাসরি আইন প্রণয়ন কিংবা চুক্তির নবায়ন সংক্রান্ত আন্তঃরাষ্ট্রীয় আলোচনাতে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও সেগুলো পর্যবেক্ষণ ও মন্তব্য করার সুযোগ পেয়ে থাকে। এছাড়া, সম্মেলনে তাদের চিন্তাভাবনা-দাবি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার জন্য নানা কর্মশালা ও কর্মসূচীর ব্যবস্থা রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে তারা বিশ্বের নেতাদের কাছে পৌঁছে দেয় তাদের বার্তা। বহুপাক্ষিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক জ্ঞানের পরিধি সম্প্রসারণের জন্য উন্নত বিশ্বের তরুণরা এ ধরনের সুবিশাল পরিসরের আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোকে প্লাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করে। যে তরুণরা বোঝার মত বয়স থেকে সমঝতার মত জটিল প্রক্রিয়াকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছে, ২০ বছর পর তারাই রাষ্ট্রের হাল ধরবে এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে। সেদিক থেকে বাংলাদেশের তরুণরা এখনো উপযুক্ত সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি। এ ধরনের সম্মেলনে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করার লক্ষ্যে তরুণ সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে (আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বাজেট সংগ্রহ একটি বড় সমস্যা। এ ব্যাপারে সরকারি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি)।
জলবায়ু তহবিল নিশ্চিতকরণ ও উন্নত বিশ্বের দেশগুলোকে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর জন্য অন্য দেশগুলোর সাথে সম্মেলনে চাপ দেবে বাংলাদেশ। জলবায়ু তহবিলের অর্থ যেন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কিংবা এ ধরনের কোন শর্তবাদী আন্তর্জাতিক সংগঠনের মাধ্যমে না আসে তাও নিশ্চিত করতে হবে। সবচেয়ে বড় যে ব্যপারে তরুণ সমাজের কণ্ঠ জোরালো হতে হবে তা হলো, জলবায়ু তহবিলের অর্থের স্বচ্ছ ব্যবহার। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তরুণ সমাজের যতটুকু সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিলো, ততটুকু না হবার কারণে এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
ডারবান সম্মেলন বাংলাদেশসহ অন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য কী ফলাফল নিয়ে আসবে তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত। তবে এ সম্মেলনই জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধানে শেষ কথা নয়। ভবিষ্যত সম্মেলনগুলোতে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ও তাদের নেতৃত্বের বিকাশের মাধ্যমে বৈশ্বিক (ও রাজনৈতিক) এ সমস্যার (ও অন্যান্য সকল সমস্যার) সমাধানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি হবে- এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১১