ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

জলবায়ু পরিবর্তনে স্থানচ্যুতি: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১১
জলবায়ু পরিবর্তনে  স্থানচ্যুতি: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

ঢাকা: নদী ভাঙ্গন, খরা এবং সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে কি পরিমাণ মানুষ স্থানচ্যুতি বা গৃহহীন হচ্ছে তা তুলে ধরতে উন্নয়ন অন্বেষণ নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাজ করে যাচ্ছে। তারা এই গবেষণার জন্য বাংলাদেশের তিনটি এলাকাকে নির্ধারণ করে।



প্রথমে তারা বেছে নেয় সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলা যা বাংলাদেশের সবচেয়ে নদী ভাঙ্গন প্রবণ এলাকা। দ্বিতীয়টি গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা যা খরা প্রবণ এলাকা। আর সর্বশেষটি হচ্ছে শরীয়তপুরের গোসাইহাট উপজেলা যা সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বৃদ্ধি ঘটলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

মানুষ ঝুঁকির কথা চিন্তা করেই মূলত: স্থানান্তরিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষ সাধারণত স্থান পরিবর্তন করে।   প্রথমে তারা অল্প দূরত্বে স্থান পরিবর্তন করে। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে অন্যত্র স্থান পরিবর্তন করে। খরা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি মানুষকে স্থানান্তরিত করে অনেক সময় ধরে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বর্তমান সমস্যা- যেমন নদী ভাঙ্গন। আর ভবিষ্যতের সমস্যা হল খরা ও সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে যে পরিমাণ লোক স্থানান্তরিত হবে তা চিহ্নিত করাই ছিল গবেষণার মূল লক্ষ্য।

জিআইএস এবং রিমোর্ট সেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে মূলতঃ তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। জিআইএস টেকনোলজি ব্যবহার করে কি পরিমাণ ভূমি নদী ভাঙ্গন, খরা ও সমুদ্রের পৃষ্ঠতার উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা বের করা হয়েছে।

আর মৌজা মানচিত্রের মাধ্যমে মানুষের ঘনত্ব অনুযায়ী কি পরিমাণ মানুষ স্থানান্তরিত হবে তা বের করা হয়েছে। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি তথ্য অনুযায়ী এই তথ্য আবার বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

এই গবেষণা প্রত্রটি মানচিত্র বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন স্থানান্তরিত মানুষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মৌজা মানচিত্র ব্যবহার করে বর্তমানে কি পরিমাণ লোক স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে কি পরিমাণ লোক স্থানান্তরিত হবে তা বের করা হয়েছে।

প্রত্যেকটি মানচিত্র বিটিএম প্রজেকশান ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে কি পরিমাণ ভূমি ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা সহজেই নির্ধারণ করা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রতিক্রিয়ার ফলে মানুষ একস্থান থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হতে বাধ্য হয়।

নদী ভাঙ্গনের ফলে চলতি বছরে কাজীপুর উপজেলায় ২৯ হাজার ৯৬১ জন মানুষ স্থানান্তরিত হয়েছে। যা মোট জনসংখ্যার ৯.৩৫%। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে তা প্রতি বছর ১ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৩ জন মানুষ স্থানান্তরিত হয় নদী ভাঙ্গনের ফলে।

নদী ভাঙ্গনের ফলে সিরাজগঞ্জ জেলার মানুষ সাধারণতঃ একটি নির্দ্দিষ্ট দূরত্বে স্থানান্তরিত হয়। কারণ তারা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল। গরীব বিধায় তাদের তাৎক্ষনিকভাবে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়া সম্ভব হয় না।

ভৌগলিক সীমারেখা এবং তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ধীরে ধীরে খরা দেখা দিচ্ছে। এই খরা মূলতঃ রিমোট সেন্সিং টেকনোলজি ও প্রাইমারি তথ্য বিশ্লেষণ করে বের করা হয়েছে। চলতি বছরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ৯৯৮ জন লোক স্থানান্তরিত হয়েছে। তা যদি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হয় তা ৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫০ জন লোক স্থানান্তরিত হচ্ছে প্রতি বছর।

সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশে কি পরিমাণ জনসংখ্যা স্থানান্তরিত হবে তা গবেষণাপত্রে উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২১ শতকে ৩১ মিলিয়ন লোক স্থানান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।