ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রাকৃতিক জলাভূমিতে মহাবিপন্ন ‘মহাশোল’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯
প্রাকৃতিক জলাভূমিতে মহাবিপন্ন ‘মহাশোল’

মৌলভীবাজার: মাছের দেশ বাংলাদেশ। সুস্বাদু বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মতো প্রাকৃতিক জলাভূমি থেকে ‘মহাশোল’মাছটিও বর্তমানে মহাবিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক কোনো বিলে মাছটিকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে কৃত্রিম উপায়ে এ প্রজাতিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা মৎস্য অধিদপ্তরের অব্যাহত রয়েছে বলে জানা যায়।

‘মাছ চাষে গড়বো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এ স্লোগানে চলতি বছরের ১৭ জুলাই থেকে শুরু হয়ে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের শেষ দিন ছিল মঙ্গলবার (২৩ জুলাই)। এ উপলক্ষে স্থানীয় মৎস্য কার্যালয় সিলেট হাওরের বিলুপ্ত মাছ হিসেবে মহাশোলের প্রসঙ্গটি উঠে আসে।

স্থানীয় মৎস্য কার্যালয় জানায়, আমাদের দেশের প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো থেকে দেশিয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছগুলো বিলুপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ প্রজনন সংকট।

ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে ফসলের ক্ষেতে ও আমাদের সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় গাছপালায় কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। সেই কীটনাশক বৃষ্টির পানিতে মিশে ছড়া-খালের মাধ্যমে প্রাকৃতিক জলাশয়ে পৌঁছে মাছের প্রজনন ক্ষমতাকে ধ্বংস করে দেয় বলে জানান মৎস্য বিশেষজ্ঞ।
     
দেশিয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ ‘মহাশোল’। একে বাংলায় ‘মহাশীর’ বলেও উল্লেখ করা হয়। এই মাছটির বৈজ্ঞানিক নাম Tor tor। প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় মাছটির সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য প্রায় দেড়শ’ সেন্টিমিটার।
 
মৎস্য বিভাগ সূত্র জানান, সম্প্রতি এই মাছটিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে মৎস্য বিভাগের গবেষণা। এ গবেষণার মধ্যে রয়েছে ‘মহাশোল’ মাছটির চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন, এ মাছটিকে বদ্ধ পানিতে আবদ্ধ করা, প্রজননসক্ষম মাছ নির্বাচন, এর প্রজনন কাল নির্ধারণকরণ এবং তার শুক্রাণু সংরক্ষণের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিতসহ পোনা প্রতিপালন।
   
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সহিদুর রহমান সিদ্দিকী এ মাছটি প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহাশোল’ অত্যন্ত বিপন্ন প্রজাতির মাছ। এই মাছটির নাম শুনে অনেকে তাকে ‘শোল’ মাছের মতো মনে করে থাকেন। আসলে তা নয়। ‘মহাশোল’ সঙ্গে ‘শোল’ মাছের কোনো মিল নেই। প্রাপ্তবয়স্ক এ মাছের মুখের দু’পাশে দুটো বা চারটি মাঝারি লম্বাকৃতির গোঁফ থাকে।  

তিনি আরও বলেন, এই মাছটি আমাদের দেশে Cyprinidae পরিবারভুক্ত মাছসমূহের মধ্যে অত্যন্ত সুস্বাদু একটি প্রজাতি ‘মহাশোল’। একসময় আমাদের বৃহত্তর সিলেটসহ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও দিনাজপুর জেলা পাহাড়িছড়া সৃষ্ট জলাভূমিগুলোতে পাওয়া যেত। কিন্তু মনুষ্যসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক কারণে এদেশে মহাশোলসহ অসংখ্য মৎস্য প্রজাতিগুলোর বিচরণ এবং প্রজননক্ষেত্র ক্রমান্বয়ে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের এ ব্যাপারে আরও সচেতনতা প্রয়োজন।  

সুস্বাদু ‘মহাশোল’ মাছটিকে সংরক্ষণের উদ্যোগ হিসেবে দ্রুত কৃত্রিম প্রজননের আওতায় এনে চাষে ব্যবস্থা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে মৎস্য বিভাগ বলে জানান মৎস্য বিশেষজ্ঞ মো. সহিদুর রহমান সিদ্দিকী।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০১৯ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।