এভাবেই আমাদের প্রতিবেশ ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়া এই প্রাণীটির অস্তিত্ব প্রায় শেষ হওয়ার পথে। হাওরবেষ্টিত অঞ্চলে এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না মেছো বিড়ালকে।
প্রাকৃতিক জলাভূমিগুলো ধ্বংসসহ হাওর অঞ্চলের নানা প্রকারের ঝোপঝাড় কেটে সাফ করে কৃত্রিম মাছের খামার তৈরির ফলে এই প্রাণীটির খাদ্য সংগ্রহ ও নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়েছে।
বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, প্রকৃতি থেকে মেছো বিড়াল বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এর অন্যতম কারণ হলো আগে আমাদের দেশে অনেক হাওর-বিল প্রকৃতি জলাভূমি ছিল। দিন দিন এসব প্রাকৃতিক জলাভূমির সংখ্যা কমে আসছে। মানুষ এগুলো ভরাট করে মাছের খামার, বাসাবাড়ি প্রভৃতি তৈরি করছে। তাহলে এ প্রাণীগুলো আসলে কোথায় যাবে? প্রাণীগুলোর তো যাওয়ার রাস্তা নেই।
তিনি আরও বলেন, বছরের পর বছর ধরে এসব জলাভূমিতে শিকার করে তারা অভ্যস্ত। যখন মানুষ একটা প্রকৃতিক বিল ভরাটের চেষ্টা করছে তখন সেখানেই কিছু জম থাকা পানির ভেতর মেছোবিড়ালটি তার খাবারের সন্ধান করছে।
প্রকৃতি থেকে এই মেছো বিড়ালটি ধ্বংস হওয়ার দু’টি কারণ সম্পর্কে আদনান আজাদ আসিফ বলেন, মানুষের খাদ্যশৃংখলের সঙ্গে এ প্রাণীটার খাদ্যশৃংখলে মিল রয়েছে। তাই মানুষ মনে করে এই প্রাণীটি আমার খাবার ‘মাছ’ খেয়ে ফেলছে। এজন্য মানুষ একে দেখলে তাড়া করে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলে। আর দ্বিতীয় কারণটি হলো- এটা মূলত মেছো বিড়াল। কেউ কেউ না জেনে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে এ প্রাণীটিকে মেছো বাঘ বলে থাকে। প্রচণ্ড রাগী প্রকৃতির প্রাণী মেছে বিড়াল। তার হিংস্রতার করণেই মানুষ তাকে অন্য প্রজাতির একটি বাঘ মনে করে মেরে ফেলে। কিন্তু বস্তুত এরা হচ্ছে মেছো বিড়াল। বাঘ শব্দটি নামের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে এ প্রাণীকে প্রকৃতি থেকে মেরে ফেলার চেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে।
‘এরা নিশাচর প্রাণী। এদের ইংরেজি নাম Fishing Cat। দিনের বেলা এরা জলাশয়ের উপরের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে থাকে। এখনও তাদের বাইক্কা বিলে মাঝে মধ্যে কদাচিৎ দেখা যায়। মানুষের মাছ ধরার জালে আটক পড়লে মানুষ এদের পিটিয়ে মারে। ’
মেছো বিড়ালকে আমি কালভার্টের নিচেও বাসা বাঁধতে দেখেছি। অর্থাৎ, এর অর্থ এটাই প্রকাশ পাচ্ছে যে, ওরা এখন আর আমাদের প্রাকৃতিক জলাশয়ে টিকতে পারছে না। প্রাকৃতিক জলাশয় দখল, কৃত্রিম মাছের ঘের তৈরি, হাওরের ঝোপঝাড়সহ গাছপালা কাটার কারণে মেছো বিড়ালদের অস্তিত্ব আজ চরম সংকটের মধ্যে।
এভাবে চলতে থাকলে আমাদের জলাভূমির এ প্রাণী কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের প্রকৃতি থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে জানান বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯
বিবিবি/এএ