ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বাংলা নামের অচেনা ছোট্ট পাখি ‘ভরত’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
বাংলা নামের অচেনা ছোট্ট পাখি ‘ভরত’ গাছের সুউচ্চ ডালে খাবার সন্ধানে বসে ‘বাংলা-ঝাড়ভরত’। ছবি : আবু বকর সিদ্দিক

মৌলভীবাজার: প্রকৃতির বিপুল রহস্যের উৎস ‘পাখি’। ছোট কিংবা বড় প্রত্যেকেরই সীমাহীন গুরুত্ব রয়েছে প্রকৃতিতে। ফুলের পরাগয়ন ঘটানোসহ যেখানে-সেখানে উদ্ভিদবীজ ছিটিয়ে বৃক্ষের উৎপত্তিসহ পরিবেশ সুরক্ষায় সৃষ্টিলগ্ন থেকে নীরবে কাজ করে চলেছে এরা। 

কোনো পাখি আবার আমাদের চারপাশের সঙ্গে খুবই নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে। অথচ আমাদের তাকে অদ্যাবধি চেনা হয়ে উঠেনি।

তেমনি একটি অচেনা ছোট্ট পাখির নাম ‘বাংলা ঝাড়ভরত’। কেউ কেউ আবার বাংলায় তাকে ‘ভরত’ বলেও থাকে।

এরা বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি অর্থাৎ সর্বত্র তাদের দেখা মেলে। এর ইংরেজি নাম Bengal Bushlark এবং বৈজ্ঞানিক নাম Mirafra assamica।  

বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘বেঙ্গল বুশলার্ক’ পাখিটি Alaudidae পরিবারের পাখি। এ পরিবারের পৃথিবীতে ১৯গণে ৯১টি পাখির প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে চারটি গণে সাত প্রজাতির পাখির বিচরণ পাওয়া গেছে। পৃথিবীতে Mirafra গণের ৩২ প্রজাতির মধ্যে আমাদের দেশে মাত্র দুই প্রজাতির ‘বুশলার্ক’ রয়েছে। ’  

তিনি বলেন, গবেষণার এ তথ্য শব্দগুলো ছাড়া সহজ করে বলতে গেলে বলতে হবে- Alaudidae পরিবারে ছয় ‘ভরত’ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে পাওয়া যায়। তার মধ্যে ‘বেঙ্গল বুশলার্ক’ অন্যতম। ‘বেঙ্গল বুশলার্ক’র আকার আমাদের জাতীয় পাখি দোয়েলের চেয়ে ছোট। মাত্র ১৪ সেন্টিমিটার এবং ওজন ২৯ গ্রাম। বেঙ্গল বুশলার্কের দেহ কালচে-বাদামি। পেট এবং ডানার পালক লাল। বুকে কালচে তিলা এবং চোখ বাদামী।

পাখিটির নাম প্রসঙ্গে ইনাম বলেন, এর নামই বলে দেয় পাখিটি আমাদের। বাংলা শব্দটি তার নামের সঙ্গে যুক্ত করে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে এ পাখিটি আমাদের দেশের সর্বত্র বিরাজমান। তবে দুঃখের কথা অন্য পাখিদের মতো আমরা চট করে তাকে চিনি না।  

বেঙ্গল বুশলার্কের গানের গলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বেঙ্গল বুশলার্ক সচরাচর পুনপুন ডাকে: চিপ-চিপ-চিপ...; ক্রমান্বয়ে নিচু করে গান ধরে সুইয়ার-সুইয়ার-সুইয়ার... সিসিসিসিসিসি...ওয়াইজি-ওয়াইজি-ওয়াইজি...। ’ কয়েকবার গান গেয়ে গানের শেষ পর্যায়ে ডানা দৃঢ় ও ওপরে মেলে ধরে প্যারাস্যুটের মতো খাড়া নিচে ভূমিতে নামে।  

‘এদের প্রজনন মাস মার্চ-আগস্ট। এ সময় অগভীর খাদ কিংবা গবাদিপশুর খুরের ছাঁচে ঘাসের ওপর অপেক্ষাকৃত সুক্ষ্ম ঘাস বিছিয়ে বাটির মতো অগভীর বাসা তৈরি করে এরা ডিম পাড়ে। বর্ধনশীল ঘাসের গম্বুজের মতো অংশে নিচে বাসা বানাতে পারে। তিন থেকে চারটি সবুজ রঙের ডিম পাড়ে এরা। ’
 
সাধারণত মুক্ত তৃণভূমিতে বিচরণ করে এবং লাফিয়ে লাফিয়ে খাবার খোঁজে। বিভিন্ন বীজ, গুবরে পোকা, অন্যান্য পোকা-মাকড়-কীটপতঙ্গ, ধান, ঘাসের বীজ, কচি ঘাসের ডগা প্রভৃতি তার খাদ্য তালিকায় রয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রখ্যাত পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯ 
বিবিবি/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।