ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

উপকারী রানি ফলের সংরক্ষণ জরুরি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৪, ২০২০
উপকারী রানি ফলের সংরক্ষণ জরুরি

মৌলভীবাজার: হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের ডাকবাংলো থেকে বের হতেই ইটঢালা পথ। তাতে শ্যাওলা ঘন হয়ে আছে। বনের প্রকৃতির খোঁজখবর নিতে ধীরে ধীরে বনের পথ ধরে গভীরে প্রবেশ।

গাছগাছালিপূর্ণ বনের এক অংশে মাঝারি একটি গাছ। কিছুটা কুইন ফ্রুটস অর্থাৎ পাট জাতীয় গাছটির পাতার মতো।

বহু বছর আগে হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে অনুরূপ একটি গাছ; যা স্মৃতিতে আজও ধোঁয়াটে! একসময় বাংলাদেশে এর উজ্জ্বল উপস্থিতি থাকলেও বর্তমানে তা বিপন্ন।

এর নাম রানি ফল। গোলাকার ফলটি মানুষ এবং বন্যপ্রাণীর খাবারযোগ্য। যা মূলতই শক্তিবর্ধক। এই উপকারী প্রজাতিটিকে সংরক্ষণের মাধ্যমে এর সম্প্রসারণ প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন উদ্ভিদ গবেষক।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর এবং উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, Queen Fruit বা ‘রানি ফল’ প্রথম দেখেছিলাম মালয়েশিয়াতে। তিন বছর আগে ঢাকা থেকে একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ফলটির ছবি পোস্ট করে। তখন থেকে আমি অনেক খোঁজাখুজি করছি। কিন্তু বাংলাদেশে এটি পাওয়া যাচ্ছিলো না। পরে অবশ্য খুঁজে পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এ বৃক্ষের ফ্যামিলিটা (পরিবার) চেঞ্জ (পরিবর্তন)। বাংলাদেশে এর প্রাপ্তির রেকর্ড আছে ‘তিলিয়েসি’তে। আমি তো এটিকে প্রথমে নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ ভেবেছিলাম। কারণ আমি এই বৃক্ষের যে নাম শিখলাম পরে দেখলাম তা চেঞ্জ। এটি তিলিয়েসি অর্থাৎ পাট গাছের পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ।

‘পরবর্তীতে ঢাকাতেই এই বৃক্ষটির সন্ধান পেলাম। গিয়ে দেখলাম আরে সেই বৃক্ষটিই তো। আমি ছবি তুললাম। পরে আমি এই উদ্ভিদটি নিয়ে অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করলাম। দেখলাম যে, এই উদ্ভিদটি একসময় ছিল বাংলাদেশের এখানে-সেখানে। ঢাকাতে তো ছিলই। কিন্তু আমার চোখে কোনোদিন পড়েনি। ’

অপর অধ্যাপকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের বিভাগের অপর এক শিক্ষক অধ্যাপক কামরুজ্জামান মজুমদার আমাকে জানিয়েছিলেন, তিনি নাকি এই উদ্ভিদটি খুলনার কোনো এক নদীর পাড়ে দেখেছিলেন। তিনিই আমাকে ঢাকাতে এ উদ্ভিদটির উপস্থিতি সম্পর্কে প্রথম তথ্য দেন এবং বৃক্ষটির অবস্থান খুঁজে পেতে সহায়তার হাত বাড়ান। পরে আমি ঢাকার ওই স্থানে গিয়ে নিশ্চিত হলাম যে- এটিই সেই উদ্ভিদ যেটি আমি প্রথম পেয়েছিলাম মালয়েশিতে। এটি পানামা ভেরি।

উপকারিতা এবং সংরক্ষণ সম্পর্কে ড. জসীম বলেন, এই ‘কুইন ফ্রুট’ পশুপাখি এবং মানুষ খায়। আমিও খেয়ে দেখেছি। পাকলে ফলটি লাল রঙ ধারণ করে। এটি একসময় বাংলাদেশের ঝোপঝাড়সমৃদ্ধ অঞ্চল বা পাহাড়ি পরিবেশে প্রচুর পরমাণে দেখা যেতো। তবে প্রকৃতিতে এখন এই উদ্ভিদটিকে পাওয়া খুবই বিরল। বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে এটিকে রক্ষা করা যেতে পারে।
 
খেয়াল করলে দেখা যায়- এর নামটির মাঝেই কিন্তু উপকারিতা রয়েছে। ‘রানি ফল’ মানেই শক্তিবর্ধক। শারীরিকভাবে দুর্বল মানুষকে বলপ্রয়োগে সহায়তা করে থাকে এই প্রাকৃতিক ক্ষুদ্রকার ফলটি। ঢাকার বারিধারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ‘এল’ ব্লকের শেষ মাথায় এই বিরল গাছটির অবস্থান রয়েছে বলে জানান ড. জসীম উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২০
বিবিবি/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।