ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চরাঞ্চলে বন্যার্তদের দুর্ভোগ, রৌমারী শহর প্লাবিত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২০
চরাঞ্চলে বন্যার্তদের দুর্ভোগ, রৌমারী শহর প্লাবিত বন্যায় প্লাবিত এলাকা। ছবি: বাংলানিউজ

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি সামান্য কমলেও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যা কবলিতরা। বাঁধ ভেঙে পানির তোড়ে রৌমারী শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙে ১২টি গ্রামসহ উপজেলা শহর প্লাবিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ও ধরলায় সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

ঘর-বাড়ি ও নলকূপ তলিয়ে থাকায় নদ-নদী অববাহিকার আড়াই শতাধিক চর ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় আড়াই লক্ষাধিক মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সংকটে পড়েছে।

তীব্র হচ্ছে গবাদিপশু ও শিশু খাদ্যের সংকটও। এ অবস্থায় অপ্রতুল ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা সবার ভাগ্যে জুটছে না। তেমন একটা চোখে পড়ছে না কোনো বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা।

রৌমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু বাংলানিউজকে জানান, উপজেলা শহরসহ পুরো উপজেলা এখন বন্যার পানিতে ভাসছে। গতরাতে বাঁধ ভেঙে আমার ইউনিয়নের অন্তত ৪৫টি গ্রাম বন্যা প্লাবিত হয়েছে। মানুষ উঁচু স্থান ও সড়কে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ত্রাণ সহায়তা অপ্রতুল।
বন্যায় প্লাবিত এলাকা।  ছবি: বাংলানিউজব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর, বালাডোবার চর, ফকিরের চর, বতুয়াতলির চর, সাহেবের আলগা ইউনিয়নের জাহাজের চর, কাশিয়ার চর, চেরাগির চরসহ অন্যান্য দুর্গম চরাঞ্চলগুলোয় বন্যার্ত মানুষজনের জীবনযাপনের একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে নৌকা। ঘরের ভেতর গলা পানি থাকলেও পার্শ্ববর্তী কোনো উঁচু বাঁধ বা শুকনো জায়গা না থাকায় তারা নৌকার মধ্যেই ছাগল, ভেড়া, হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে দিন যাপন করছে। এসব এলাকার নলকূপ তলিয়ে থাকায় তারা বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে।

উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিক আলী মণ্ডল বাংলানিউজকে জানান, তার ইউনিয়নের অন্তত ৫ হাজারে পরিবারের প্রায় ২২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে নৌকা বা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়ে আছে। ঘর-বাড়িসহ চারিদিকে পানি থাকায় চুলা জ্বালানোর কোনো উপায় নেই। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার এই ইউনিয়নে হতদরিদ্র পরিবারগুলো শিশুসহ খাদ্য সংকটে পড়েছে। অপ্রতুল খাদ্য সহায়তা সবার মাঝে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা ও বিশুদ্ধ পানিসহ গো-খাদ্য জরুরি প্রয়োজন।

কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে ৪শ’ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ এসেছে। এরমধ্যে ১৭০ মেট্রিক টন চাল উপজেলাগুলোতে উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বরাদ্দ ১৩ লাখ টাকার মধ্যে ৪ লাখ টাকা, ৪ হাজার শুকনা প্যাকেটের মধ্যে ২ হাজার প্যাকেট, ২ লাখ টাকার শিশু খাদ্য ও ২ লাখ টাকার গো-খাদ্য উপজেলাগুলোতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বন্যায় প্লাবিত এলাকা।  ছবি: বাংলানিউজকুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য হ্রাস পেলেও এর অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে ধরলা ও তিস্তার পানি কমে এ দুটি নদী অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, সরকারিভাবে বন্যা দুর্গতদের জন্য ১৬০ মেট্রিক টন চাল ও ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং তা বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বন্যায় পানিবন্দি লোকজনকে নিরাপদ স্থানে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। তাদের সহায়তায় চাল ও শুকনো খাবারসহ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও শিশু ও গো-খাদ্য বিতরণেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদশে সময়: ১১২৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২০
এফইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।