ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

‘রানি’র প্রত্যাবর্তন

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০২০
‘রানি’র প্রত্যাবর্তন মৌলভীবাজারের ফিরে এসেছে ‘রানি মাছ’। ছবি: সুলতান মাহমুদ

মৌলভীবাজার: মাছপ্রিয় বাঙালির ফিরে আসছে সুদিন। ‘বিলুপ্ত’ বা ‘বিপন্ন’ মাছের কোনো কোনোটা ফিরে আসতে শুরু করেছে।

নানা কারণে প্রাকৃতিক জলাভূমি থেকে হারিয়ে যাওয়া মাছ ফের আটকা পড়ছে জেলেদের জালে। মিলছে স্থানীয় হাট-বাজার বা গঞ্জে।  

মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট গবেষকদের বাস্তবমুখী কার্যক্রমে মাছের কোনো কোনো প্রজাতি চিরতরে বিলুপ্ত হতে পারেনি। প্রজাতিগুলো পুনরায় জলাশয়ে ফিরে আসতে শুরু করেছে। মাছে-ভাতে বাঙালি খাবারের থালে তুলতে পারছেন প্রিয় মাছ। বিপন্ন তালিকা এমনই প্রত্যাবর্তন করা মাছ ‘রানি’।  

রানি মাছ প্রসঙ্গে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সুলতান মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, মৎস্যকূলে রানি হওয়ার মতো সব সৌন্দর্যই রয়েছে তার। হলুদ সোনালি মিশেল দেহে তীর্যক কালো-বাদামি ডোরা কাটা দাগ আর ধনুকের মতো বাঁকানো পৃষ্ঠদেশ অপরূপ সৌন্দর্যের যেন নিখুঁত আল্পনা। এককালে এদেশের মিঠাপানির জলাশয় বিশেষ করে খাল, বিল, হাওর-বাওড় ও নদীতে প্রচুর পাওয়া যেত। সাধারণত জলাশয়ের তলদেশে পরিষ্কার পানিতে বাস, তবে ঘোলা পানিতেও এদের কখনো কখনো দেখা যায়। এতে অবশ্য মাছের রং কিছুটা ফ্যাকাশে হয়।  

...প্রাপ্তিস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এ মাছের বিস্তৃতি রয়েছে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এদের দেখা যায়। সিলেটের হাওরগুলোতে এক সময় রানি মাছ নিয়মিত দেখা মিললেও কয়েক বছর ধরে এটি বিপন্ন ছিল। কালে-ভদ্রে অন্য মাছের সঙ্গে মিশ্রভাবে মাছটির হয়তো দেখা মিলতো। তবে সম্প্রতি প্রচুর পরিমাণে এই মাছ উঠছে জেলের জালে। আমাদের স্থানীয় বাজারেও পাওয়া যাচ্ছে বেশ।  

‘স্বাদ’ ও ‘বিলুপ্তির কারণ’ সম্পর্কে এ সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, মিঠাপানির এ মাছগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। এর পুষ্টিগুণও ভালো। বাংলাদেশের মানুষ এই মাছ পছন্দ করেন। বাজারে এর বেশ চাহিদা। তবে হাওরে ইজারাদাররা নির্বিচারে মাছ শিকার, প্রাকৃতিক বিবর্তন ও প্রজনন কেন্দ্র ধ্বংস করায় মাছটি বিলুপ্ত হতে চলছিল। বিশেষ করে শুকনো মৌসুমে খাল-বিল শুকিয়ে মাছ আহরণ করায় মা মাছের অবশিষ্টও আর থাকতো না। তবে ইদানীং এই মাছ দেখা মিলছে নিয়মিত। সরকারের মৎস্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে মাছটিকে বাঁচিয়ে রাখার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

...করোনাকালীন উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরার চাপ কম থাকা, প্রজনন মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত, যথাসময়ে পানি বাড়ার কারণে এবছর রানি মাছের প্রাচুর্যতা বেশি। খেপলা জাল, টানা জাল, গোগাজাল, চই, ডরি ইত্যাদি দিয়ে এদের ধরা হয়।  

অ্যাকুরিয়ামের প্রসঙ্গ টেনে তিনি উল্লেখ করেন, আবদ্ধ জলাশয়ের চেয়ে উন্মুক্ত জলাভূমি এদের প্রজননের জন্য উপযোগী। প্রোটিনের চাহিদা মেটানো ছাড়া অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে এটা বাসাবাড়ির সৌন্দর্য বাড়াতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশেই অ্যাকুরিয়াম ফিশ হিসেবে রপ্তানি করা সম্ভব এ মাছ।

অঞ্চলভেদে রানি মাছকে বেতি, বৌমাছ, পুতুল মাছ, বেতাঙ্গী, বেত্রাঙ্গী, বেটি, বুকতিয়া ইত্যাদি নামে ডাকা হয়। ‘সিপ্রিনিডি’ বর্গের অধীন কোবিটিডি গোত্রভুক্ত এ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘বেটিয়া ডরিও’। এ রানি মাছসহ বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রক্ষায় জলমহাল খনন, নির্বিচারে মাছ শিকার বন্ধ এবং প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধিরও প্রয়োজন বলে জানান সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৪, ২০২০
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।