ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

বন্ধ সমুদ্র সৈকত, খাবারের অভাবে একমাসে ১০ ঘোড়ার মৃত্যু

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪২ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২১
বন্ধ সমুদ্র সৈকত, খাবারের অভাবে একমাসে ১০ ঘোড়ার মৃত্যু

কক্সবাজার:  সমুদ্র সৈকতে শিশুদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ঘোড়া। এসব ঘোড়ার পিঠে চড়ে কতোইনা আনন্দ পাই শিশুরা।

তখন বাবা-মায়েদেরও খুশির সীমা থাকেনা। কিন্তু লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্র সৈকত বন্ধ। এতে ঘোড়া মালিকদের আয় রোজগার না থাকায় ঠিকমত খাবার দিতে পারছেনা ঘোড়াগুলোকে। যে কারণে খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে অনেক ঘোড়া।

তবে ঘোড়ার মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন সংখ্যা উল্লেখ করা হলেও কক্সবাজার ঘোড়া মালিক সমিতির সভাপতি আহসান উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, গত এক থেকে দেড়মাসে অন্তত ১০টি ঘোড়া মারা গেছে। এর আগে, গত বছরের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত লকডাউন চলাকালে মারা গেছে আরও ২০টি ঘোড়া। খাবারের অভাব, অপুষ্টি, রোগাক্রান্ত ও দুর্ঘটনায় এসব ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে।

আহসান জানান, প্রতিটি ঘোড়ার জন্য দৈনিক প্রায় ৩০০ টাকার খাদ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু গত ১ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয় দফায় লকডাউন শুরু হলে সমুদ্র সৈকতসহ পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় খাদ্যের যোগান দিতে না পেরে ঘোড়াগুলোকে উন্মুক্তস্থানে ছেড়ে দেন ঘোড়া মালিকেরা। যে কারণে রাস্তাঘাটে প্লাস্টিকসহ পঁচা জিনিস খেয়ে অনেক ঘোড়া পেট ফুলে মারা গেছে। এছাড়াও খাবারের অভাবে, সড়ক দুর্ঘটনায়, কুকুরের কামড়ে মারা গেছে কিছু ঘোড়া।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ১ এপ্রিল থেকে করোনার কারণে দুই মাস ধরে সৈকত বন্ধ রয়েছে। এতে তাদের আয় রোজগার না হওয়ায় ঘোড়ার খাদ্য জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। প্রতিদিন একটি ঘোড়ার পেছনে ৩০০-৩৫০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু এ খরচ তারা বহন করতে পারছে না।

এদিকে কক্সবাজার শহরের অভুক্ত ৫৫টি ঘোড়ার আগামী একমাসের খাদ্য দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে এসিআই মোটরসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব’। তারা ৫৫টি ঘোড়ার জন্যে দৈনিক ৬ হাজার টাকার ভূসি, পাতার মিড়া (নিন্মমানের গুড়) সরবরাহ করবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে আহসান জানান রোববার থেকে সংগঠনটি ঘোড়ার জন্য খাদ্য সরবরাহ শুরু করেছে।

>>>কক্সবাজারে ঘোড়ার মৃত্যু: খাদ্য-চিকিৎসা নিশ্চিতে নোটিশ

অন্যদিকে কক্সবাজার শহরের জীবিত ও সুস্থ ঘোড়ার জন্য নিরাপদ আবাসন ও খাদ্য নিশ্চিত করতে দুই মন্ত্রণালয়ের সচিব, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ১৩ জনকে নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) এবং পিপল ফর এনিমল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।

রোববার ডাকযোগে বেলার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর স্বাক্ষরিত এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে নোটিশদাতাকে জানানো না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়।

নোটিশে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ভেটেনারি কাউন্সিলের সভাপতি, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র, জেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তা, উপজেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এবং কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার সৈয়দ মুরাদ ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সৈকতে পর্যটকদের বিনোদনে ব্যবহারের জন্যে ২২ জন ঘোড়া মালিককে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় ঘোড়া মালিকদের আয় রোজগার না থাকায় ঘোড়াগুলো পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে না। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে ভূসি ও ছোলা বিতরণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. অসীম বরণ সেন বলেন, খাদ্য সংকটে পড়ে ঘোড়ার মৃত্যুর বিষয়টি তাদের জানা নেই। তবে কয়টি ঘোড়ার মৃত্যু হয়েছে এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত ৮ মে ও ২৯ মে দু-দফায় ঘোড়ার জন্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।    

বাংলাদেশ সময়: ০০৩২ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২১
এসবি/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।